
যুক্তরাস্ট্র প্রতিনিধি :
জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রতিবাদ ও সমর্থনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে গোটা এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এই পরস্পর-বিরোধী জমায়েত একপর্যায়ে সহিংস রূপ নেয় এবং গোটা এলাকায় সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনা।খবর আইবিএননিউজ ।
নিউইয়র্ক পুলিশের বেষ্টনীর ভেতরে পৃথক স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা জড়ো হয়ে এই বিক্ষোভ ও শান্তি সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পূর্বঘোষিত ‘যেখানে ইউনূস-সেখানেই প্রতিরোধ’ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতি দেখা যায়। অপরদিকে, ইউনূসের ভাষণের সমর্থনে বিএনপির শান্তি সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন ।
শান্তি সমাবেশে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ এবং জিল্লুর রহমান জিল্লু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন ,বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল,জসীম উদ্দীন এবং সরাফত হোসেন বাবু।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, নিউইয়র্ক স্টেট ও মহানগর বিএনপি ছাড়াও শ্রমিক দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা স্লোগানে নেতৃত্ব দেন। তারা ফ্যাসিবাদের চিরঅবসানে মুহাম্মদ ইউনূসকে আরো কঠোর হবার আহবান জানান। স্লোগানে তারেক রহমানকে বাংলাদেশের পরবর্তী অবিসংবাদিত নেতা হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
মোহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত ও অবিলম্বে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা জানিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা আকতার হোসেন বাদল, আলহাজ্ব সোলায়মান ভ’ইয়া, আলহাজ্ব বাবরউদ্দিন, জসীম ভ’ইয়া, এম এ বাতিন, পারভেজ সাজ্জাদ, এম এ সবুর, কাজী আসাদউল্লাহ, আবু সুফিয়ান, গিয়াসউদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ। স্লোগানে নেতৃত্ব দেন মাওলানা আতিকুর রহমান, সাঈদুর রহমান সাঈদ, জসিম উদ্দিন, বদরুল হক আজাদ, আনিসুর রহমান, যুবনেতা জাকির এইচ চৌধুরী, আবু সাঈদ, ছাত্রনেতা মাজহারুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
অন্যদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম,সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, অন্যতম উপদেষ্টা,১৯৭২-এর বাকসু”র জিএস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.প্রদিপ রজ্ঞন কর, অন্যতম উপদেষ্টা ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন,অন্যতম উপদেষ্টা রমেশ চন্দ্য নাথ,এম ফজলুর রহমান, ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক,শামসুদ্দিন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, এম এ করিম জাহাঙ্গির, শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ার আলী,ইমদাদ চৌধুরী, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল হাসিব মামুন, মজিবর রহমান মিয়া, শাহিন আজমল, শেখ আতিক, সোলায়মান আলী, সাখাওয়াত বিশ্বাস, নুরুজ্জামান সর্দার, শাহনাজ মমতাজ, সাহানারা রহমান, রুমানা আক্তার,ফরিদা আরভী,বীর মুক্তিযোদ্ধা জালালউদ্দিন জলিল, বীর
মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি,ইসমাইল খান আনসারী,ফারুক হোসাইন,মনজুর চৌধুরী,কাজী আজিজুল হক খোকন,জুয়েল আহমেদ,মিসবাহ আহমেদ, ফরিদ আলম, নূরল ইসলাম, আবুল কাশেম ভূঁইয়া,এন আমিন, তানভির আলম, এডভোকেট জহির, মুজিবউদ্দিন, জিআই রাসেল, শেখ সেলিম, সেবুল মিয়া, জেড চৌধুরী জয়, খন্দকার জাহিদুল ইসলাম,শহিদুল ইসলাম,জাহিদ হোসেন, হৃদয় মিয়া ,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুইবেক শাখা-কানাডার সভাপতি মুন্সী বশীর,সহ সভাপতি ইন্জিনিয়ার এলেন হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন মিয়া ,কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিবুর রহমান,যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শেলীম যুবেরী,সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী সুইট প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন যে, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের সস্তা অঙ্গিকারে ক্ষমতা দখলকারী মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার বাংলাদেশে চরম বৈষম্য তৈরি করেছে। তারা আরও দাবি করেন যে, হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনাও অবিশ্বাস্যরকমভাবে বেড়েছে এবং যারা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, তারাই হত্যা বা গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন। তারা অবিলম্বে মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
পুলিশ বিক্ষোভ ও শান্তি সমাবেশের জন্যে ব্যারিকেড দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করে দিলেও পরস্পরের বিরুদ্ধে উষ্কানীমূলক বক্তব্য/স্লোগানে কোনো কমতি পরিলক্ষিত হয়নি। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেই একপর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি জিআই রাসেলকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
রাসেল ভুলবশত: বিএনপির বেষ্টনীতে ঢুকে পড়েছিলেন ইউনূসের ব্যাঙ্গচিত্র সম্বলিত ‘গার্বেজ ক্যান’ হাতে নিয়ে। এ সময় বিএনপির কর্মীরা ইউনূসের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে রাসেলের ওপর হামলা চালালে তিনি আহত হন। তবে অকুস্থল থেকে কাউকে গ্রেফতারের তথ্য জানা যায়নি।
পরস্পর-বিরোধী সমাবেশ শেষে ঘরে ফেরার সময় যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের নেতা হৃদয় মিয়ার ওপর হামলে পড়েন বিএনপির কর্মী রিয়াজ রহমান। এই অতর্কিত হামলায় সকলে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। হৃদয় মিয়া আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে মারদাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
কর্তব্যরত পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে রিয়াজকে গ্রেফতার করে। হৃদয় মিয়াকেও প্রথমে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছিল। কিন্তু অকুস্থলে থাকা অপর পুলিশ অফিসারেরা জানান যে, হৃদয় হচ্ছেন ভিকটিম। এরপর তার হ্যান্ডকাফ খুলে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।
উল্লেখ্য, ২২ সেপ্টেম্বর আমিরাত এয়ারলাইন্সে জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পর ৪ নম্বর টার্মিনালের সাধারণ যাত্রীদের সাথে হেঁটে গাড়ি বারান্দায় যাবার সময় ডিম হামলার শিকার হন এনসিপির নেতা আখতার হোসেনসহ মোহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী রাজনীতিকরা। ডিম হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।তবে পরদিন জামিনে মুক্ত হন ।
এই ঘটনার প্রতিবাদে এনসিপি ও বিএনপির কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের শায়েস্তার সুযোগ খুঁজছিলেন বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের সামনে হৃদয় মিয়া ও জি আই রাসেলের ওপর হামলার মধ্যদিয়ে সেই ক্ষোভের প্রশমন ঘটানো হলো বলে বিএনপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: