odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলার রকস্টার নগর বাউল জেমসের ৬১তম জন্মদিন আজ

সাদা পাঞ্জাবি গিটার হাতে এক ম্যাজিশিয়ানের গল্প

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১২

বিশেষ প্রতিবেদন

নগর বাউল জেমস এক আবেগের নাম ভালোবাসার নাম। কারো কাছে তিনি গুরু, কারো কাছে নগর বাউল। গিটার হাতে নিলেই অন্য এক মানুষ, তোমরাই আমার জান তোমরাই আমার প্রাণ। আহা কত সরল অথচ ভক্তদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার কারণে তিনি সবার প্রিয়। শাবাশ বাঙালি এই ছোট কথাটাও ভালো লাগার। অবশ্যই তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত রকস্টার। যার পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। যিনি আমাদের নগর বাউল জেমস। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর আজকের এই দিনে নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৬১তম জন্মদিনের দিন। শুভ জন্মদিন গুরু শুভ জন্মদিন নগর বাউল জেমস।

আমরা যারা মিলেনিয়াল আর জেন-জি বড়ো একটা অংশ নগর বাউল জেমস এর গানে কথায় ফ্যাশনে কনর্সাটে মুগ্ধ ছিলাম আছি? থাকবো। পুরো স্কুল লাইফ পাগল করে রাখছিলো আমি এক নগর বাউল, মান্নান মিয়ার তিতাস মলম আর যাত্রা পালা। গানের কথা আর গায়কিতে ছিলো জাদুকরী এক ব্যাপার। কখন বাংলার লাঠিয়াল না হয় তোমাদের মাঝে কি কেউ আছে বন্ধু আমার। নব জীবনের কথা বলছি আর নয় হয় চোখ বুঝলেই দেখি পলাশির প্রান্তর। বন্ধুদের আড্ডায় স্কুলের যাওয়ার রাস্তায় বা ক্রিকেট খেলার মাঠে কেউ না কেউ গুন গুন করতো। তখনও তো নগর বাউল হয় নাই নগর বাউল নামে একটা অ্যালবাম ছিলো। কালোর উপর লাল দাগের চাদর গায়ে অন্যরকম এক স্টাইল। আমরাও স্বাভাবিক ভাবেই একই চাদর গায়ে জড়িয়ে ছিলাম। তারপর এলো জগৎ বিখ্যাত একক অ্যালবাম দু:খিনী দু :খ কর না। সাদা পাঞ্জাবি আর বুট নতুন স্টাইল নতুন লুক আর অদ্ভুত সুন্দর বারটি গানের এক অ্যালবাম। জগৎ না কাপালেও বাংলাদেশে কাপিয়েছিলো এই অ্যালবাম। তলে তলে তলাটে তলাটে জিকির উঠে আবার আরেক পাশে খেটে খাওয়া মজুরের ঘামে ভেজা ফসলে ঈশ্বর আছে। ঘুমাও তুমি বা লুটপাট হয়ে যাবে। একজন বিবাগি আর গিটার কাঁদতে জানে। প্রতিটা গানই একটা হাজার পৃষ্ঠার উপন্যাস ছিলো সে সময়। লেইস ফিতা লেইস অ্যালবামটাও ছিলো ঐ সময়ে অন্যরকম ভালোলাগার। এই অ্যালবাম শেষ ছিলো ফিলিংস ব্যান্ডের প্রকাশ করা তারপর নগর বাউল নামেই পথ চলা।

শৈশব কৈশোর জেমস ম্যানিয়ার আক্রান্ত ছিলাম এরকম গানের কথা লিখলে আরো বড়ো করে লেখা যায়। সম্ভবত ২০০১ বা ২০০২ আমরা বন্ধুরা গিয়েছিলাম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দোগাছী বা এরকম নামের এক জায়গায় খোলা মাঠে জেমসের কনর্সাট দেখতে। সেদিনটা ছিল বলা যায় বাংলাদেশের ওপেন কারো কনর্সাটের সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতির একটা দিন। বিকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নয়টা তখন। সবার মাঝে অস্থিরতা জেমস কি আসে নাই। চারিদিকে চিৎকার হৈ চৈ। ঠিক তার কিছুক্ষণ পর অন্ধকার স্টেজে আলো ফুটে উঠলো। সাদা পাঞ্জাবি চাদর গায়ে, এক হাতে গিটারটা উপরে উঠিয়ে বরাট কণ্ঠে বললো এত চিৎকার কীসের। আর সব হট্ট গল চিৎকার হৈ চৈ থেমে গেলো এক সাথে। আমার তখন মনে হচ্ছিল এ কোন মিউজিশিয়ান না ম্যাজিশিয়ান। আহা সেই রাত ছিলো প্রাণ খুলে জেমসের গান শোনার এক রাত। দুই ঘণ্টার উপর একটানা গেয়েছিলো সেদিন। 

এবার সবার জানা কিছু কথা বলি। জেমসের সংগীত যাত্রার শুরুটা হয় পারিবারিক দ্বিমতের মধ্যে। একসময় সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিজস্ব পথ ধরতে প্রলুব্ধ করে। তিনি চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে চলে যান। এখান থেকেই শুরু হয় তার সংগীত ক্যারিয়ার। ১৯৮০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ফিলিংস, আর ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম অ্যালবাম স্টেশন রোড। ১৯৮৮ সালে একক অ্যালবাম অনন্যা তাকে পরিচিত করে তোলে। এরপর একের পর এক অ্যালবাম প্রকাশিত হয় : জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ (১৯৯৯) ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎ ফিলিংস ভেঙে তিনি গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড নগর বাউল। একক অ্যালবামেও ছিল উজ্জ্বল, অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও জেমসের সুনাম অল্প দিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে বলিউড চলচ্চিত্র ‘গ্যাংস্টার’-এ প্লেব্যাক করেন, যেখানে তার গাওয়া গান ‘ভিগি ভিগি’ এক মাসেরও বেশি সময় টপচার্টে শীর্ষে ছিল। ২০০৭ সালে তিনি ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ ছবিতে গাইছিলেন ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ গান দুটি। ২০১৭ সালে তার গাওয়া ‘সত্তা’ ছবির ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি’ গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং সেই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করে।

আজ ৬১তম জন্মদিনে, নগর বাউল জেমস শুধু সংগীতপ্রেমীদের নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্যও প্রেরণার উৎস। তার গান ও ব্যক্তিত্ব আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে যেন সময়ের কোনো সীমা নেই তার শিল্পকর্মে। আবার শুভ জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা শুভকামনা অফুরান।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: