ঢাকা | Monday, 20th October 2025, ২০th October ২০২৫
When the State Strikes the Teacher, It Wounds Its Own Conscience

লাঠির আঘাতে জাতির বিবেক: শিক্ষক নিগ্রহের পুনরাবৃত্তি ও রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৯ October ২০২৫ ২৩:২১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৯ October ২০২৫ ২৩:২১

When the State Strikes the Teacher, It Wounds Its Own Conscience.

সম্পাদকীয়

শিক্ষক মর্যাদার অবক্ষয় হউলে নিশ্চিতভাবেই জাতির মেরুদণ্ডে আঘাত আসিবে। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষকগণ সেই মেরুদণ্ডের মজ্জা ও প্রাণশক্তি। আর যদি এই মেরুদণ্ডে ব্যাধি দেখা দেয়, তবে জাতি কখনোই সোজা হইয়া দাড়াইবার অবকাশ পাইবে না। শিক্ষক যদি অপমানিত হন, তবে শিক্ষার প্রদীপ নিভিয়া যায়; শিক্ষক যদি নিগৃহীত হন, তবে জাতির বিবেক স্তব্ধ হইয়া পড়ে।

মনে রাখিতে হইবে—যে জাতি আপন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করিতে পারে না, তাহা কখনোই প্রকৃত অর্থে উন্নতির মুখ দেখিতে পারে না। শিক্ষক যদি সুখে না থাকেন, তবে জাতির সুখও এক মরীচিকা মাত্র।

দুঃখের বিষয়, আজকের বাংলাদেশে মনে হইতেছে—শিক্ষক সমাজকে অত্যাচার করাই সহজতর কর্ম। কারণ, তাঁহারা বিষদাঁতহীন এক নিরীহ জাতি—না আছে করমের বল, না আছে তরবারির জোর। তাহাদের একমাত্র শক্তি তাহাদের আত্মমর্যাদা, তাহাদের নীরব স্থিতধী সম্মান। অথচ এই মূল্যস্ফীতির যুগে, ন্যূনতম মর্যাদার সহিত পরিবার লইয়া জীবনধারণ করাটাই আজ শিক্ষকগণের নিকট এক কঠিন সাধনা।

শিক্ষক যদি পরাভূত হন, তবে শিক্ষার আলোকও ক্ষীণ হইয়া পড়ে। আর শিক্ষক যদি নিরাপদ না থাকেন, তবে জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হইবে—এ সত্য আমাদের অগ্রাহ্য করা চলিবে না।

গত ১২ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখভাগে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদিগের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা আমাদের বিবেককে গভীরভাবে আঘাত করিয়াছে। বহুদিন ধরিয়া মাধ্যমিক স্তরের এই শিক্ষকগণ ন্যায্য বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতার দাবিতে আন্দোলন করিয়া আসিতেছেন। তাঁদের এই দাবি কোনো বিলাসিতা নহে; বরং জীবনধারণের ন্যূনতম মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আর্তি। অথচ সেই আর্তি আজ দমন হইতেছে শক্তির জোরে—জবাবের ভাষায় নয়, লাঠির আঘাতে।

এই নগ্ন আক্রমণ কেবল পুলিশের দায়িত্বচ্যুতি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় চেতনার অধঃপতনের প্রতীক। যে সমাজে শিক্ষকগণের উপর লাঠি উঠে, সেই সমাজ আসলে নিজের ভবিষ্যৎকে আঘাত করে। শিক্ষক জাতির বিবেক; তাঁহাদের সম্মান রক্ষা করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ভাঙিবার উদ্দেশ্যে পুলিশ যখন সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে, তখন প্রশ্ন জাগে—এ কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়, না এক শাসনযন্ত্রের অন্ধ প্রতিক্রিয়া?

এই ঘটনার পূর্বসূরিও নিকট অতীতে বিদ্যমান। গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে শাহবাগে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশেও একইরূপ নির্মমতা সংঘটিত হইয়াছিল। তখনও পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করিয়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষকদিগকে আহত করিয়াছিল। দেশব্যাপী প্রবল প্রতিবাদের পর আশ্বাস দেওয়া হইয়াছিল—‘এইরূপ ঘটনা আর ঘটিবে না’। কিন্তু মাত্র আট মাসের ব্যবধানে সেই প্রতিশ্রুতির বিশ্বাস আজ আবার ভঙ্গ হইল।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পুলিশের এই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের দায় সরকার এড়াইতে পারে না। প্রশাসনকে অবশ্যই এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করিয়া জবাবদিহি নিশ্চিত করিতে হইবে। কারণ, কোনো উসকানি ব্যতীত শিক্ষকের উপর লাঠিচার্জ করা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, বরং সভ্যতার প্রতি এক চরম অবমাননা।

বাস্তব সত্য এই যে, শিক্ষক সমাজকে অত্যাচার করা সহজ—তাঁহারা বিষদাঁতহীন এক নিরীহ জাতি; না আছে ক্ষমতার বল, না আছে অস্ত্রের জোর। তাঁহাদের একমাত্র শক্তি তাহাদের আত্মসম্মান, আর সেই সম্মানেই নিহিত থাকে জাতির নৈতিক শক্তি।

আজকের এই মূল্যস্ফীতির যুগে শিক্ষকগণ যখন মর্যাদার সহিত পরিবার লইয়া বাঁচিবার সংগ্রামে ক্লান্ত, তখন রাষ্ট্রের উচিত তাঁহাদের পাশে দাঁড়ানো—প্রহারের জন্য নয়, প্রণামের জন্য। মনে রাখিতে হইবে, যে জাতি আপন শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়, সেই জাতি অন্ধকারে হারায় নিজের দিশা।

শিক্ষক যদি অপমানিত হন, তবে শিক্ষার আলো নিভিয়া যায়; শিক্ষক যদি নিগৃহীত হন, তবে জাতির বিবেক স্তব্ধ হইয়া পড়ে। মনে রাখিতে হইবে—যে জাতি আপন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করিতে পারে না, তাহা কখনোই প্রকৃত অর্থে উন্নতির মুখ দেখিতে পারে না। শিক্ষক যদি সুখে না থাকেন, তবে জাতির সুখও এক মরীচিকা মাত্র।

-লেখক উপদেষ্টা সম্পাদক অধ্যাপক . মুহাম্মদ মাহবুব লিটুৎ (odhikarpatranews@gmail.com)

#শিক্ষকনিগ্রহ #শিক্ষকের_মর্যাদা #বাংলাদেশের_শিক্ষানীতি #শিক্ষকদের_অধিকার #TeacherRights #EducationCrisis #BangladeshTeachers #RespectForTeacher



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: