বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে আলবদর–আলশামস জড়িত ছিল না—এমন বিতর্কিত দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান (টিপু)। তাঁর এই বক্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতি আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, ইতিহাসবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আবু আল ইউসুফ বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড কোনো আলবদর–আলশামস বাহিনী করেনি; বরং পার্শ্ববর্তী একটি দেশের লোকজন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন তোলেন, “পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তার প্রমাণ কী?” একই সঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেও বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার কেন হয়নি—সে প্রশ্নও তোলেন।
আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে আবু আল ইউসুফ বলেন, বাম সংগঠন ও বামপন্থী সাংবাদিকেরা এখনো ইতিহাসে আলবদর–আলশামসকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি জামায়াতকে ‘সঠিক ইতিহাস’ তুলে ধরতে সরকারের কাছে দাবি জানানোর পরামর্শ দেন।
এই বক্তব্যের পরপরই নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল হুদা বলেন, “এটি পুরোপুরি ইতিহাসের বিকৃতি। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সর্বস্বীকৃত ঘটনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মেধাশূন্য করতে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।”
ইতিহাস–গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, এই ধরনের বক্তব্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করছে এবং বিএনপির ঘোষিত অবস্থানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
সমালোচনার মুখে পড়েও নিজের বক্তব্যে অনড় থাকার কথা জানান আবু আল ইউসুফ খান। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় কার—তা প্রমাণসহ ইতিহাসে তুলে ধরা প্রয়োজন।
এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এমন মন্তব্য জাতীয় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শহীদদের প্রতি অবমাননাকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: