odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫
কারণ নিহিত আছে সৌদি সমাজে যে ব্যাপকতর পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে তার ভেতর।

নিষিদ্ধ সিনেমা হঠাৎ কেন বৈধ হয়ে গেল সৌদি আরবে ?

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৭ April ২০১৮ ১৭:৫২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৭ April ২০১৮ ১৭:৫২

বিংশ শতাব্দীতে আল-সৌদ পরিবারের ক্ষমতার উৎস ছিল দুটি। একটি হচ্ছে তাদের তেল সম্পদ, আর দ্বিতীয়টি হলো রক্ষণশীল ইসলাম ধর্মীয় নেতাদের সাথে একটা অনানুষ্ঠানিক 'চুক্তি'।

'কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে' - লিখছেন ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথ্যাম হাউসের বিশ্লেষক জেন কিনিনমন্ট। 'কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এসে দেখা যাচ্ছে যে তেলের অর্থ এখন আর সরকারি ব্যয় মেটানো বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট নয় এবং সৌদি রাজপরিবারের নতুন নেতাদের ওপর ধর্মীয় নেতাদের প্রভাবও কমে গেছে।

পঁয়ত্রিশ বছর পর এই প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে সিনেমা হল খুলতে যাচ্ছে তার ক'দিন পরই। প্রথম ছবি দেখানো হবে ব্ল্যাক প্যান্থার।

কিন্তু যে দেশে সাড়ে তিন দশক সিনেমা নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে হঠাৎ কি কারণে সিনেমা আবার 'বৈধ' হয়ে গেল?

এর কারণ নিহিত আছে সৌদি সমাজে যে ব্যাপকতর পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে তার ভেতর।

সৌদি আরব                                   সৌদি আরবে সিনেমা খুলছে কিছুদিনের মধ্যেই

 

 

সৌদি আরবের জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ এবং এর বেশিরভাগই তরুণ যাদের বয়েস ৩০-এর নিচে। তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্যই বাদশাহ সালমান নতুন যুবরাজ করেছেন তার ৩২ বছর বয়স্ক পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে - যাকে ডাকা হচ্ছে 'এমবিএস' নামে।

এই এমবিএস-ই এখন সৌদি আরবের ভবিষ্যত গতিপথ তৈরির প্রধান সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন।

 

 

সৌদি আরব                                সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে

তিনি কার্যত একটা নতুন মডেল দিচ্ছেন সৌদি আরবের জন্য: বেশি করে কাজ করো, জীবনের আনন্দ উপভোগ করো - কিন্তু সৌদি সিস্টেমের সমালোচনা করো না। এভাবেই তিনি নাগরিকদের আরো বেশি রাজনৈতিক অধিকার দেবার যে চাপ তা মোকাবিলা করতে চাইছেন।

অনেকটা প্রতিবেশী দুবাইয়ের মতো, তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা বাড়াচ্ছেন না - তার পরিবর্তে সামাজিক স্বাধীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

সিনেমা হল খোলা তারই অংশ।

কিন্তু একটা গুরুতর প্রশ্ন হলো: সৌদিরা কি আসলেই আরো উদার সমাজ চায়?

প্রকৃতপক্ষে সৌদি সমাজ বহুবিচিত্র, এখানে নানা ধরণের লোক আছে। এখানে এক মিলিয়নের বেশি লোক বিদেশে লেখাপড়া করেছে, আর বাকিরা এখনো পুরো ঐতিহ্যগত জীবনে ডুবে আছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিচ্ছেন, সিনেমা হল খুলে দিচ্ছেন - এতে সৌদি সমাজে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে পরিবর্তনে গতি কতটা দ্রুত হওয়া উচিত, এবং কি থরণের সংস্কৃতি সেখানে গড়ে ওঠা উচিত?

সৌদি আরব                         সৌদি আরবে বহু পরিবর্তেনর পেছনে আছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

এই বিতর্কটা সবচেয়ে বেশি জোরালো নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে।

সৌদিদেরদ দু-তৃতীয়াংশই অনলাইনে প্রতি সপ্তাহে একটি করে সিনেমা দেখে। ১০ জনের ৯ জনের হাতেই স্মার্টফোন আছে। অনেকে সস্তা প্লেনের টিকিট নিয়ে বাহরাইন বা দুবাইয়ে সিনেমা দেখতে যায়।

সৌদি বিমান সংস্থার ফ্লাইটে সিনেমা দেখানো হয়, তবে সেখানে মেয়েদের খোলা বাহু বা মদের বোতলের মতো 'অনুচিত' জিনিসের দৃশ্য ঝাপসা করে দেয়া হয়।

দু'চারজন সৌদি এখন সিনেমা বানাতেও শুরু করেছেন।

সৌদি আরব                 এমবিএস সৌদি আরবের ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন 'মডেল' নিয়ে আসছেন

আসলে সৌদি আরবে সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা জনমতের কারণে আরোপ করা হয় নি - করা হয়েছিল মৌলবীদের সন্তুষ্ট করতে।

দেশটির গ্রান্ড মুফতি বলেছিলেন, সিনেমায় নির্লজ্জ এবং অনৈতিক জিনিসে দেখা যেতে পারে, এবং তা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা উৎসাহিত করতে পারে।

একসময় এসব কথা বড় আলোচনা তৈরি করতো। এখন আর তা করে না।

এমবিএসের সময় সৌদি সরকার মনে করছে যে এই ধর্মীয় নেতাদের হাতে বেশি ক্ষমতা থাকা রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক, কারণ তা উগ্রপন্থা উস্কে দিতে পারে বা রাজনৈতিক ক্ষমতা-ভাগাভাগির দাবিও তুলতে পারে।

এখন বরং সৌদি সরকার ইঙ্গিত দিচ্ছে - আগামীতে এই ধর্মীয় নেতাদের হাতে ক্ষমতা ও প্রভাব থাকবে আগের চাইতে কম।

bbc



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: