odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫
পুলিশ পাহারায় নামাজ পড়ছেন গুরগাঁওয়ের মুসলিমরা

নামাজ পড়ার সময় 'জয় শ্রীরাম' বলে হামলা ভারতের গুরগাঁওতে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৩ May ২০১৮ ১৭:২০

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৩ May ২০১৮ ১৭:২০

 

দিল্লির উপকন্ঠে গুরগাঁওতে মুসলিমরা যাতে উন্মুক্ত সরকারি জমিতে নামাজ পড়তে না-পারে, সে জন্য আন্দোলনে নেমেছে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। একে ঘিরে এলাকায় তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে।

এই ঘটনার সূত্রপাত গত ২০শে এপ্রিল, শুক্রবার। গুরগাঁওয়ের অভিজাত এলাকা সেক্টর ৫৩-তে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সরকারি একটি মাঠ রয়েছে, সেখানেই জুম্মার দিনে নামাজ পড়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় শ-পাঁচেক মুসলিম।

গুরগাঁওয়ের ওই মাঠে বহুদিন ধরেই নামাজ পড়া হচ্ছে, কিন্তু সেদিন সেখানে নামাজে বাধা দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে জড়ো হয় বেশ কিছু যুবক।

আশেপাশের ওয়াজিরাবাদ ও কানহাই গ্রামের ওই হিন্দু যুবকরা 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে দিতে নামাজের জন্য আসা ব্যক্তিদের ব্যঙ্গ করতে থাকে, তাদের প্রার্থনা পন্ড করারও চেষ্টা করে।

পরে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে হরিয়ানা পুলিশ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়।

 

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ভিডিও থেকে চিহ্নিত করে হামলাকারী ছজন যুবককে গ্রেফতারও করা হয়। পরে তারা অবশ্য সবাই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।

এর পরই সোমবার গুরগাঁওতে 'সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি' নামে একটি সংগঠন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায়।

তাদের দাবি ছিল, গুরগাঁওতে হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকার আশেপাশে যে সব খোলা জমি আছে সেখানে মুসলিমদের নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করতে হবে।

বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, ভারত বাঁচাও অভিযান, অখিল ভারতীয় হিন্দু ক্রান্তি দল ইত্যাদি মোট বারোটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন একজোট হয়ে এই সমিতিটি গঠন করেছে।

গুরগাঁওয়ের আকাশচুম্বী বহুতলগুলোর মাঝে এখনও অল্প কিছু ফাঁকা জায়গা অবশিষ্ট আছেগুরগাঁওয়ের আকাশচুম্বী বহুতলগুলোর মাঝে এখনও অল্প কিছু ফাঁকা জায়গা অবশিষ্ট আছে

 

 

হিন্দু ক্রান্তি দলের নেতা রাজীব মিত্তাল বলছেন, "এখানে আসলে দুটো সমস্যা আছে। প্রথমে তো মুসলিমরা নামাজ পড়ার নাম করে সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে। আর আমাদের যে হিন্দু ছেলেরা নিজেদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে।"

সোমবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন সুবেহ সিং ভোরা, যিনি স্থানীয় একটি গ্রামের সরপঞ্চ ছিলেন।

তিনি বলছেন, "মুসলিমদের কেন খোলা মাঠে এসে নামাজ পড়তে হবে? তারা তো তাদের মসজিদে গেলেই পারে!"

কিন্তু জুনায়েদ শেখ নামে যে উর্দু শিক্ষক ৫৩ সেক্টরের মাঠে সাপ্তাহিক নামাজের আয়োজন করেন, তিনি বলছেন গরিব মানুষের কাজের ফাঁকে দূরের মসজিদে যাওয়ার সময় হয় না বলেই তারা এই উন্মুক্ত জায়গায় আসেন।

"আমাদের একটা মসজিদ পাঁচ কিলোমিটার, আর অন্যটা এখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে। অটো বা রিক্সা ভাড়া দিয়ে অত দূরে কি প্রত্যেক শুক্রবারে যাওয়া সম্ভব?" বলছেন তিনি।

স্থানীয় পুলিশের সম্মতি নিয়েই কাছের অন্য একটি মাঠ থেকে সরে এসে ২০০৭ সাল থেকে মুসলিমরা এখানে নামাজ পড়ছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন। তবে পুলিশের সম্মতি ছিল মৌখিক, তার জন্য কোনও লিখিত অনুমতিপত্র তাদের নেই।

গত শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) তারা এই মাঠে নামাজ পড়েছেন পুলিশি পাহারায়। তবে আগামিকাল (৪ঠা মে) আবার জুম্মার নামাজের সময় কোনও গন্ডগোল বাঁধে কি না, এই ভয়ে তটস্থ হয়ে রয়েছেন তারা অনেকেই।

গত কয়েক বছরে ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা আর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার যে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে, গুরগাঁওয়ে নামাজ পড়া নিয়ে এই অশান্তি আর বিক্ষোভ তাতে সর্বশেষ সংযোজন।

bbc



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: