odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে ফেডারেল কোর্টের রায়ে আলোচনার পথ সুগম হয়েছে : আইনমন্ত্রী

odhikar patra | প্রকাশিত: ২২ September ২০১৯ ১৯:৫৫

odhikar patra
প্রকাশিত: ২২ September ২০১৯ ১৯:৫৫

 

 

॥ মো. সাজ্জাদ হোসেন ॥
ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রবিবার  : আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফেডারেল কোর্টের রায়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কানাডার সাথে আলোচনার পথ সুগম হয়েছে।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই রায়ের ফলে একটা লাভ হয়েছে যে, কানাডিয়ান সরকার বলেছিল এটা সাট কেইস, এটা নিয়ে আর আলাপ-আলোচনা হতে পারে না। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এখন তাদের সাথে আলোচনা করা যাবে। নূর চৌধুরী কোন ভুল তথ্য কানাডিয়ান সরকারকে দিয়েছে কিনা, এটা দেখা যাবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেই তথ্যটা ঠিক করে দিতে পারবো। এ ছাড়া নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কি আছে তা দিতে পারবো। এটা নিশ্চয়ই একটা ইতিবাচক দিক। আর সেই সম্ভাবনা আমরা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো।’
নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কানাডিয়ান সরকারকে এখন একটি চিঠি দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেই চিঠিতে সঠিক তথ্য দিয়ে নূর চৌধুরীর বিষয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, ‘ফেরত আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে এটা অত্যন্ত ছোট একটি পদক্ষেপ। আজকেই আমরা এতোটা আশাবাদী হতে চাই না যে, তাকে ফেরত আনতেই পারবো বা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তবে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে।’
জাতির পিতার পলাতক খুনিদের দেশে ফেরত আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নূর চৌধুরী এবং রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবো। বাকি ৪ জন, যাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নেই, তাদেরও অবস্থান জেনে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
কানাডার ফেডারেল কোর্টে মামলার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে আনিসুল হক বলেন, ‘কানাডিয়ান সরকারের কাছে বাংলাদেশ নূর চৌধুরীকে ফেরত চাইলে, কানাডিয়ান সরকার বলে যে, তোমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড আছে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। সেই কারণে তাকে ফেরত দেব না। আমরা যখন দেখলাম, তাকে সেখানে এ্যাসাইলাম দেয়া হয়নি এবং তার ডিপুটেশন (আশ্রয়ের আবেদন) স্থগিত করে দেয়া হয়। ডিপুটেশন স্থগিত করে দিলে যেই দেশের নাগরিক তাকে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠাতে হয়।’
তিনি বলেন, নূর চৌধুরী কানাডিয়ান সরকারের কাছে তাকে ফেরত দেয়ার আগে, তাকে ফেরত দিলে সে কি ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবে তা যাচাই করার জন্য ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট’ আবেদন করে। এই আবেদনের পর ডিপুটেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট’ এটা কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, কি তথ্য দিয়েছে জানতে চাইলে কানাডিয়ান মিনিস্ট্রি অব ইমিগ্রেশন রিফিউজিস এন্ড সিটিজেনশীপ তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদেরকে তাদের বলার কথা, কিন্তু তারা জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার কথা বলে এটা বলেনি এবং আমাদের কি জনস্বার্থ এটাও দেখাতে বলে। আমরা বললাম, এটা ঠিক না, তার স্ট্যাটাস সম্পর্কে এবং কি কারণে দেরি করছেন তা জানাতে পারেন। তারা যখন আমাদের আবেদন নাকচ করে দেয়, তখন সেখানে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে কানাডিয়ান ফেডারেল কোর্টে আবেদন করি। আদালত বলেছে, যে তথ্যগুলো দেয়া হচ্ছে না, সেইগুলো তাদের দেয়া উচিত। কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।
কানাডার ফেডারেল কোর্ট ১৭ সেপ্টেম্বর এক রায়ে ওই দেশে নূর চৌধুরীর অবস্থানসংক্রান্ত তথ্যের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আদেশ দেয়। ফেডারেল কোর্টের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি এই আদেশ দেন।
রায়ে আদালতের বিচারক বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেয়ার সিদ্ধান্ কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। কিন্তু মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান বিদেশে পলাতক রয়ে যান।
এর মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে এখনও বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: