ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুর মৌলিক অধিকার শিক্ষা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫০

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫০

 

 

শিশু এক অপার বিস্ময়। সেই বিস্ময়ের জগৎ নিয়ে গবেষণা-ভাবনা, পর্যালোচনা-বিশ্লেষণের কোনো অন্ত নেই। শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানীসহ অসংখ্য বিজ্ঞজন শিশু সম্পর্কে ভাবছেন। তাদের সেই ভাবনা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ নির্ধারিত হয় শিশু-শিক্ষার মৌল আদর্শ। শিশুর অপার সম্ভাবনা, তাদের অসীম কৌতূহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের মৌলিক পটভূমিতে পরিমার্জন করা হয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের। ২০১১ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুনঃনির্ধারিত হয় শিশুর সার্বিক বিকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে রেখে।
সঠিক শিক্ষা কাঠামো এবং যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ইপ্সিত চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। তাই শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন চলছে। দিন বদলের ইশতেহার, রপকল্প-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে ২৪টি লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুমোদিত হয়। মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নে ও প্রগতি অর্জনের উদ্দেশে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলাই এই শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধিকাংশ বিষয়ের মতো শিশুর শিক্ষার বিষয়টিও উপেক্ষিত থেকে গেছে। বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হলেও অনেক শিশু পড়ালেখা শেষ করছে না, প্রতিবছর বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। আবার অনেক শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তিই হচ্ছে না বা হতে পারছে না। প্রতিবন্ধী, উপজাতীয়, হাওর ও পাহাড়ী এলাকার অনেক শিশু এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ারই সুযোগ পাচ্ছে না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয় থেকে নানা কারণে ঝরে পড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমছে না।
আমরা সবাই জানি, শিশুকে আদর্শ ও সুচিন্তার নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সুশিক্ষার প্রয়োজন। বর্তমানে অনেক কারণেই ব্যাহত হচ্ছে সুশিক্ষা। বৈষম্য-এর অন্যতম কারণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বলতে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও সুবিধাভোগী শিশুদের কথা বোঝানো হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, বস্তির শিশুদের আচার-আচরণ অন্যান্য শিশুর তুলনায় অনেকটা খারাপ হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষা দিতে পারলে এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর, আন্তরিক ও ভালো ব্যবহার করলে সকল শিশুর ব্যবহার ও আচরণে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক শিশু সনদ এবং শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশুকে তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদনের সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে তাদেরকে রক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন ও হরতালের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটেছে। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। আবার বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজধানী জুড়ে শুরু হয় অসহনীয় যানজট। তখন ছোট ছোট শিশুদের ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে নিরুপায় বসে থাকতে হয়। এতে স্কুলে যেতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশের সুবিধাবঞ্চিত, স্কুল বহির্ভূত, ঝরে পড়া এবং শহরের কর্মজীবী দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। দেশের নির্বাচিত ৮৯টি উপজেলায় ৭.৫০ লক্ষ শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে। দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরের কর্মজীবী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের উন্নততর জীবন অনুসন্ধানে শিক্ষা, নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম চলছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সরকারের দারিদ্য্র হ্রাসকরণের কৌশলের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকার দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। সে কারণেই সরকার এ খাতে অধিক হারে বরাদ্দ দিয়ে আসছেন। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হার বাড়ানো, ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমাদের সকলের উচিত এই অর্জন ধরে রাখা। যা আমাদের সবার, সব নাগরিকের জাতীয় দায়িত্ব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: