ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

কালীগঞ্জে পাষন্ড স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালের বেডে গৃহবধু রোকসানা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৪২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৪২

লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় রোকসানা বেগম (২২) নামে এক গৃহবধুকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে পাষন্ড স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। নির্যাতনের স্বীকার ওই গৃহবধু বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ ঘটনায় গত শনিরবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ওই গৃহবধুর ভাবী আকলিমা বেগম (৩৫) বাদী হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার(২১ ডিসেম্বর) বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার শাখাতী গ্রামে তার শশুর বাড়ীতে এ নির্যাতনের ঘটনটি ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার ওই গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র ও নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধুর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক(২৫), শাশুড়ী আরজীনা বেগম(৪০) এবং নানী শাশুড়ী ইয়াতন নেছা(৫৫)। নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধু জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের মেয়ে রোকসানা বেগম।


রবিবার দুপুরের দিকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নির্যাতনের স্বীকার রোকসানা বেগম ব্যাথার যন্ত্রনায় বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার মাখা ফেটে যাওয়ায় সেখানে ৫টি সেলাই দিয়েছে চিকিৎসকরা। এতে করে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় ভালো করে কথা বলতেও পারছে না সে। এ সময় তার সাথে কথা হলে সে জানায়, ২০১৪ সালে যৌতুক হিসেবে ১ লক্ষ্য টাকা ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্নের গহনা প্রদানের মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বিয়ে হয় তার। এরপরেও বিয়ের সপ্তাহ না যেতেই তাকে আবারো ১ লক্ষ্য টাকার জন্য চাপ দেয়। রোকসানার বাবা গরীব হওয়ায় টাকা দিতে অপারগতা জানালে তার উপড় নেমে আসে নির্যাতনের খোড়াগ। স্বামী, শাশুড়ি ও নানী শাশুড়ির নির্যাতন দিন দিন সহ্য করে আসা রোকসানা ঘর আলোকিত করে এরই মধ্যে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এতে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। কারন কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া তার অপরাধ হয়েছে। দিন দিন বেড়েও ওঠে রিতা আক্তার নামে শিশুটি। বর্তমানে তার বয়স ২ বৎসর।


রোকসানা আরো জানান, নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তার বাবা এই শোকে অসুস্থ্য হয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। এছাড়া এ নিয়ে এর আগে একাধিক বার ইউপি সদস্য শালিশি বৈঠকের মাধ্যমে আব্দুর রাজ্জাককে সতর্ক করে দেন। এর পরেও চলতে থাকে তার উপর নির্যাতন।
তিনি আরো জানান, ঘটনার আগের দিন তার ভাই শিমুলের মোবাইল ফোনে কল করে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাইতে বলে আব্দুর রাজ্জাক। ঘটনার দিন বিকেলে শিমুল সেখানে গেলে বোনের উপর নির্যাতনের কথা জানতে পেরে তৎক্ষনাত ওই ইউপি সদস্য’র কাছে যায়। এমবস্তায় আবারো যৌতুকের এক লক্ষ্য টাকা চায় রোকসানার কাছে। সে দিতে অস্বীকার হলে নির্যাতন শুরু করে তারা। টেনে হেঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে তার স্বামী লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ত মারধর শুরু করিলে সে মাটিতে পড়ে যায়। আবারো পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে তার স্বামী। তখন সে চিৎকার শুরু করলে তার শাশুড়ি ছোঁড়া দিয়ে মাথায় আঘাত করলে কপালে অনেকটা কেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয়।


এ সময় রোকসানার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী চামটা হাটে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সময় তার ভাই শিমুল খবর পেয়ে ছুটে এসে তাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করান। এ বিষয়ে রোকসানার স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এটা সম্পূর্ন মিথ্যা অভিযোগ। তাকে আমি বা আমার কেউ মারধর করেনি। তবে কিভাবে মাথা ফেটেছে বা হাসপাতালে ভর্তি আছে এ ব্যাপারে সে কিছুই জানেনা।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক(এসআই) বাদল কুমার জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


তবে এ ব্যাপারে জানতে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মকবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে, আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো বলে ফোনটি রেখে দেন।
হাসান মাহমুদ। লালমনিরহাট।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: