
চাঁদ ও মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর লক্ষ্যে বরাদ্দ বাড়িয়ে গবেষণা ও জলবায়ু কর্মসূচির বাজেট কাটছাঁটের প্রস্তাব দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার প্রকাশিত প্রস্তাবিত বাজেটে নাসার মোট বরাদ্দ প্রায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে ফেলা হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এই বাজেটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নাসার মালিকানাধীন স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেট ও ওরিয়ন ক্যাপসুল ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদের কক্ষপথে পরিকল্পিত ‘গেটওয়ে’ মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ বাতিল করা।
এ ছাড়া বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত ‘মার্স স্যাম্পল রিটার্ন’ মিশন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মঙ্গলে পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার সংগ্রহ করা শিলা নমুনা পৃথিবীতে এনে প্রাচীন জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন বিশ্লেষণ করার কথা ছিল।
প্রস্তাবনায় যুক্তি দেওয়া হয়েছে, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য মানুষের মঙ্গল অভিযানের মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব হবে।
নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই প্রস্তাব চাঁদ ও মঙ্গল—উভয় অভিযানে একযোগে বিনিয়োগ করছে, এবং একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ‘চীনের আগে চাঁদে ফিরে যাওয়ার এবং প্রথম মানবকে মঙ্গলে পাঠানোর’ লক্ষ্যে মনোযোগ দিচ্ছে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথম নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আর্টেমিস প্রকল্প নানা দফায় বিলম্বের মুখে পড়েছে।
এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আর্টেমিস-৩ অভিযানের পর এসএলএস ও ওরিয়ন ব্যবহারের অবসান ঘটবে। এই অভিযানে প্রথমবারের মতো নভোচারীদের চাঁদে নামানোর কথা রয়েছে।
বহুদিন ধরেই এসএলএস ব্যবস্থাকে ‘অতিরিক্ত ব্যয়বহুল ও অকার্যকর’ বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে এর বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে স্পেসএক্সের স্টারশিপ ও ব্লু অরিজিনের নিউ গ্লেনকে—যাদের এখনও পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইট সার্টিফিকেশন মেলেনি।
স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং তথাকথিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’-এর ব্যয় সংকোচন কার্যক্রম তদারক করছেন।
নাসার প্রধান হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি জারেড আইজ্যাকম্যান, একজন প্রযুক্তি কোটিপতি, যিনি স্পেসএক্সের সঙ্গে দুবার মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে নাসার জন্য ১৮.৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা গত বছরের ২৪.৮ বিলিয়নের তুলনায় ২৪.৩ শতাংশ কম।
তবে এতে মহাকাশ অন্বেষণ খাতে অতিরিক্ত ৬৪৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। শুধু চন্দ্রাভিযানের বরাদ্দই ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মঙ্গলভিত্তিক নতুন কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, পৃথিবীবিষয়ক বিজ্ঞানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে জলবায়ু পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের মতো ‘কম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত’ প্রকল্পগুলো বাতিল করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।
এ ধরনের বাজেট প্রস্তাবকে সাধারণত কংগ্রেসে আলোচনা শুরুর আগে হোয়াইট হাউসের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে দেওয়া হয়। তবে এবারের বাজেট ইতিমধ্যেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে।
প্ল্যানেটারি সোসাইটি বলেছে, ‘হোয়াইট হাউস নাসার ইতিহাসে এক বছরে সবচেয়ে বড় বাজেট কাটছাঁট প্রস্তাব করেছে।’
তারা আরও বলে, ‘এই ধরনের বাজেট ছাঁটাই কোনো নিরীক্ষিত নীতির অংশ নয় কিংবা নিশ্চিত প্রশাসক নিয়োগের পরে আসেনি। এতে নাসার দক্ষতা বাড়বে না, বরং বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, করদাতাদের অর্থ অপচয় করবে এবং মহাকাশে মার্কিন নেতৃত্বকে দুর্বল করবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: