-2018-03-25-14-53-19.jpeg)
একটি শিশু সুন্দর ও সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার প্রধান শর্ত হচ্ছে, সঠিক, সুষম ও নির্ভেজাল খাবার। কিন্তু আমাদের শিশুরা যে খাবার গ্রহণ করছে তা কতখানি নিরাপদ তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

আমরা আমাদের শিশুদের যা খাওয়াচ্ছি তার বেশির ভাগই ভেজাল, পচা, বাসি, ও বিষাক্ত। এইসব খাবারে শিশুদের শরীরে মারাত্বক ক্ষতি হয়। শিশুদের শরীরে ক্ষতিকর উপাদান প্রতিরোধ করার ক্ষমতা খুবই কম থাকে বড়দের তুলনায়।
সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিশু বয়স থেকেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হয়। শিশু বয়সেই অপুষ্টি কিংবা বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হলে সারা জীবনটাই তার নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত থাকতে হয়।
একটি শিশু সুন্দর ও সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার প্রধান শর্ত হচ্ছে, সঠিক, সুষম ও নির্ভেজাল খাবার। কিন্তু আমাদের শিশুরা যে খাবার গ্রহণ করছে তা কতখানি নিরাপদ তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
দুধঃ শিশুদের অন্যাতম প্রধান খাবার দুধ। কিন্তু খাটি ও ভেজালমুক্ত দুধ পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার থেকেও বেশি কঠিন। প্যাকেটজাত দুধে ক্ষতিকর উপাদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গরুর দুধেও ভেজাল আছে বেশি দুধ দেওয়ার জন্য গরুকে নানান ওষুধ খাওয়ানো হয় যা বিষের সমতুল্য।
চালঃ শিশু যে ভাত খাবে সেই ভাতের চালেও ভেজাল। চালের যত ধরনের মিনারেল আছে তা থাকে চালের আবরণের উপরে। চাল সরু করতে গিয়ে ব্যবসায়িরা চালের উপরের উপকারি উপাদানটাই ফেলে দিচ্ছে। চালের উপরের অংশ ফেলে দেবার পর যা থাকছে শুধুই চালের শর্করা অংশ যা শুধু শিশু নয় বড়দের শরীরেও নানা ক্ষতির কারণ।
ফলাঃ আমাদের দেশের বেশির ভাগ ফল গাছে ফুল থাকা অবস্থা থেকে ফল বড় হওয়া পর্যন্ত, পাকা এবং বাজার নেয়া থেকে বিক্রির আগ পর্যন্ত নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয়। যার কারণে প্রায় বেশির ভাগ ফলই বিষাক্ত।
মাছঃ মাছ বেশি দিন সতেজ ও তরতাজা রাখার জন্য মাত্রারিক্ত রাসায়নিক দেওয়া হয়। ফলে দিনের পর দিন এই মাছ পঁচেনা। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন এখন বাজারের মাছে মাছি বসেনা। তাহলে ভেবে দেখুন এইসব মাছ কি পরিমান বিষাক্ত।
মুরগির মাংসঃ বাচ্চাদের প্রিয় খাবার মুরগির মাংস। কিন্তু সেখানেও ভেজাল। ব্যবসায়ীরা মুরগি দ্রুত বড় করার জন্য নানান ধরনের হরমোন প্রদান করে। তাই এইসব মুরগির মাংসও অনেক বিষাক্ত। এমন বিষাক্ত মুরগির মাংস একজন পূর্ন বয়স্ক ব্যাক্তি যদি দিনের পর দিন খান তাহলে তার শরীরে পরবর্তীতে এন্টিবায়োটিক ঔষধ আর কাজ করে না এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। তাহলে এই বিষাক্ত মুরগির মাংস শিশু শরীরে কি ধরনের ক্ষতি করে তা একটু ভেবে দেখা দরকার।
চকলেট, চিপস, নানা ধরনের প্যাকেটজাত জুস, বিস্কুট ও রং মিশ্রিত বিভিন্ন খাবার যে বিষাক্ত অনেকেই তা জানেন। তারপরেও বাচ্চাদের এগুলো খেতে দেন।
আমাদের শহরাঞ্চলগুলোতে দ্রুত ফাস্টফুড কালচার গড়ে উঠেছে। আমরা জানি ফাস্টফুড শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু তার পরও দিনের পর দিন ফাস্টফুড খাচ্ছি এবং বাচ্চাদেরও খাওয়াচ্ছি।
শহর বা গ্রামের স্কুলের গেটে অনিরাপদ খাদ্যের সমারোহে ভরপুর থাকে। এসব খাবার থাকে খোলা। খাবারে ধুলাবালি পড়ে। মাছিসহ নানা ধরনের জীবাণু থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে শিশুদের কাছে এই খাবারগুলো অনেক পছন্দ।
সুষম ও ভেজালমুক্ত খাবারের অভাবে আমাদের শিশুরা ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে, শরীরের পুষ্টি ঠিক থাকছে না। নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত, ঠান্ডা, কাঁশি, এলার্জি, মুটিয়ে যাওয়া, থাইরয়েড সমস্যা, হরমোন জনিত সমস্যা, চোখের সমস্যা, পেটের সমস্যা, মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, খাদ্যে অরুচি, লেখাপড়া মনোযোগ কম ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যার সাথে বেড়ে উঠছে আমাদের সন্তানরা।
আমাদের শিশুদের এইসব খাবার গ্রহণের কারণে যে স্বাস্থ্যহানী ঘটছে তা যদি এখনই খেয়াল না করি তাতে বেশিদিন দূরে নয় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হবে একটি অসুস্থ জাতি।
আমাদের সন্তানের জন্য আমাদেরকেই বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুর পুষ্টির চাহিদা এবং ভেজালমুক্ত খাবারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নির্ভেজাল খাবারের জন্য অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
এখনকার মা-বাবাদের প্রধানতম চাহিদা হচ্ছে শিশুর লেখাপড়া। কিন্তু এটি একটি ভুল চিন্তা। প্রথমে শিশুর সুস্বাস্থ্য, দ্বিতীয় শিশুর চিত্তবিনোদন আর তার পর হল একজন শিশুর লেখাপড়া। এই বিষয়টি মনে রেখে শিশুর খাবার দাবারে যত্ন নিলে আগামীতে আমরা একটি সুস্থ জাতি পাবো, নাহলে হয়ত চরম ক্ষতির মাশুল দিতে হবে আমাদের।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: