ঢাকা | সোমবার, ৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
পাপ করে কে আর অপমানিত হয় কে

খারাপদের জন্য ভালোদের হয়রানি

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৮ ১৬:৩৭

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৮ ১৬:৩৭

ইডেনের ৩ শিক্ষার্থীসহ ৬ জনকে যৌন হয়রানি, ৪ ব্যবসায়ী আটক

রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকার চাঁদনী চক মার্কেটে একদল নারীকে দোকানিরা নিপীড়ন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ ঘটনায়রাজধানীর চাঁদনী চক মার্কেটের চার দোকনীকে আটক করেছে পুলিশ শুক্রবার বিকেলে মার্কেটটির সামনে জনসম্মুখেই এমন ঘটনা ঘটেছে দাবি করে ভুক্তভোগী এক নারী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

রাতে আনুষা লামিয়া নামের একটি আইডি থেকে স্ট্যাটাসটি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠে। যে দোকানের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে তার একটি ছবিও শেয়ার করা হয়েছে পোস্টের সঙ্গে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী লিখেছেন, ‘আজকে বুঝলাম মেয়ে মানুষ কতটা অসহায়। আর আমাদের বাংলাদেশে মেয়েদের সাপোর্ট মেয়েরাই করে না, তাহলে ছেলেদের আশা কি করে করি??? সময়টা ছিল আজ বিকেল বেলা, চাঁদনী চক মার্কেটের

সামনে। একেবারে রাস্তার পাশেই এই দোকানটা। আমি, আমার দুই ফ্রেন্ড, আম্মু আর আমার দুইটা খালামনি মিলে গাউসিয়াতে শপিং করতে গিয়েছিলাম। অনেক অনেক ভীড় ছিল। ভীড়ে আমি আর আমার ফ্রেন্ড আম্মুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আম্মু আর খালামনিরা এই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে কল দিয়ে বলে- রাস্তার পাশের দোকানের সামনে আছে তারা। এখানে উল্লেখ্য- দোকানে কোনো কাস্টমারই ছিল না। আর উনারা কাস্টমারের প্রবেশপথে দাঁড়ায় নাই, পিলার ঘেষে দাঁড়িয়েছিলো। অনেকক্ষণ খোঁজার পর আমরা তাদের পেলাম দোকানের সামনে। আমরা উনাদের নিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকবো এমন সময়ে ভেতর থেকে দোকানের এক কর্মচারী বলল- মাইয়া মানুষ জাগায় জাগায় দাঁড়াইয়া রঙ্গলীলা করে, হুদাহুদি বোরকা মারায় রাস্তায় তো ঠিকই চুদতে বাইর হয় (আমার আম্মু আর খালামনি বোরকা পড়া ছিল)!! এটা শুনে দোকানের সব কর্মচারী সজোরে হেসে উঠল!! আমি আম্মুকে বলসি শুনসো কি বলসে!! এমন সময় ভিতরের এক কর্মচারী বলে- যান যান, দোকানের সামনে দাঁড়াইয়া আকাম করতাসেন, সরেন, কাস্টমার আইব জায়গা খালি করেন!! আমি সে কর্মচারীকে বললাম- এভাবে কথা বলতেসেন কেনো আপনি?? কাস্টমারদের সাথে এভাবে কথা বলে? কর্মচারী জবাবে বলল- বালের কাস্টমার আপনেরা, বালডা ফালাইতাসেন দোকানের সামনে!!! এ কথা শুনার পর আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম- একটা থাপ্পড় দিব! বেয়াদব! এভাবে কথা বলতেসেন কেনো? লোকটা বলল- তোরে থাপ্পড় দিমু হারামজাদি। আমাগো দোকানের সামনে খাড়ায়ে ধমকি দেস! আমি বললাম- আসেন দেন থাপ্পড়, দোকানে দাঁড়ায়ে বাজে কথা বলতেসেন আবার বলেন ধমকি দেই! এ কথার জবাবে লোকটা বললো- থাপ্পড় নাহ, তোরে (ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য) দিমু!!! আমার আম্মু প্রচন্ড ক্ষেপে যায়, আম্মু বেয়াদব অসভ্য ইত্যাদি অনেক কিছু বলে। ঠিক এই বাকবিতন্ডার সময়ে আশেপাশে অনেক মেয়েই শুনসে যে আমাদের কি বলে গালি দিচ্ছে বা কিসব বলছে। সবাই অনেক দূরে দাঁড়ায়ে তামাশা দেখছিলো, কেউ কেউ হাসছিলো, কানে কানে কথা বলছিলো!!! অথচ সেই অসভ্য কর্মচারীদের সাপোর্ট করে আরো অনেক ছেলে জড়ো হয়ে আমাদের বলছিলো- ‘মেয়ে হয়ে এত কথা বলেন কেনো?!’.... ‘মাইয়া মাইনষের (ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য) ধার বেশী’!!!....‘এইসব বেশ্যা মাগীগুলি রাস্তায় বাইর হয় ক্যান!!!’ আমার আম্মু অন্যায় সহ্য করতে পারে না। তাই আম্মু বকাবকি করতেছিলো ওদের। আমার ফ্রেন্ড, আমিও জবাব দিতেছিলাম ওদের সাথে!! ছেলেগুলা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছিলো আমাদের, যার থেকে বের হবার ও উপায় ছিলো না।

এমন সময় এক ছেলে আমার এক ফ্রেন্ডকে (ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য) বলে গালি দেয়। আমার ফ্রেন্ড ছেলের কলার চেপে ধরে। ছেলেটা আমার এক ফ্রেন্ডের বুকে হাত দেয়!!! তারপরও আমরা কোনো ভাবেই দুর্বল হয়ে যাই নাই। আম্মু, খালামনিও বকাবকি করছে ওদের। শেষ পর্যন্ত দোকানিরা যখন বুঝছে তারা পারতেসে না তখন যে কর্মচারী গালাগালি করসে তাকে সরায়ে ফেলছে ওরা। সরায়ে আমাদেরকে সরি বলতেছে। কিন্ত তারপরও বলে- আপু মেয়েমানুষ হয়ে শুধু শুধু ক্যান বাড়াইলেন, আচ্ছা যান সরি আমরা!!! অনেক আপু ভাববেন, আমাদেরই দোষ ছিলো, মেয়ে হয়ে কেনো বাড়াবাড়ি করতে গেলাম!! মেয়েমানুষের হতে হয় নম্র, ভদ্র, যতই বাজে ভাষায় গালি দেয়া হোক না কেন প্রতিউত্তর দেয়ার কোনো দরকারই নাই!!! কারণ- তারা ‘মেয়েমানুষ’(!)... কোনো মেয়ের সাথে অন্যায় হলে আশেপাশের অন্য কোনো মেয়ের এগিয়ে আসার দরকার নাই!!! দাঁড়ায়ে তামাশা দেখুক, মজা নিক!! কি দরকার মেয়েমানুষের ঝামেলার মধ্যে জড়ানোর???!!! অথচ ছেলেরা ছেলেদের সাপোর্ট করবার আগে একটাবারও ভাবে না সে ছেলেটা অন্যায় করতেছে নাকি ঠিক!! যত কুণ্ঠাবোধ, ভয়, হিংসামি সব আমাদের মেয়েদের মাঝেই বিদ্যমান!!!! হায়রে মেয়েমানুষ!!! হায় মেয়েমানুষ!!!’ প্রকাশ্য দিবালোকে নারীদেরকে নিপীড়নের এমন ঘটনায় অনেকেই সমোলোচনা করেছেন। কেউ কেউ এ ঘটনার জন্য ভুক্তভোগীদের সমবেদনা জানিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। স্ট্যাটাসের নিচে আধহারা আশা নামে একজন লিখেছেন, ‘নিউমার্কেট-‘নিউমার্কেট-গাউছিয়া এখন খুব খারাপ অবস্থা! ওরা সবাই এক জোট হয়ে এমন করে, এমনকি সমিতিতে নালিশ করলেও মেয়েদেরই অপমান করে দেয় সবাই মিলে, আরও কয়েক জন এভাবে post করছে।’ নুরজাহান শৈলী লিখেছেন- ‘ইদানীং এই বদমাইসগুলার বহুত সাহস বাড়ছে! এরা নিজেদের মা-বোন কে নূন্যতম সম্মানটা দেয় নাকি এতে সন্দেহ আছে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: