ঢাকা | সোমবার, ৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
জিন্দাবাজারের ইদ্রিস মার্কেটের হামিদ ট্রাভেলস-এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমদ সরকারিভাবে বিনাখরচে সৌদিআরবে গৃহকর্মী পাঠানোর কথা বলেন।

হামিদ ট্রাভেলস-এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমদ ব্ল্যাক-মেইলিংয়ের শিকার হয়ে স্ত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:১৭

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:১৭

 

 

 

দিনমজুর স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সিলেটের গৃহবধূ রিপা বেগম। সরকারি খরচে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে জেনে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ৮ মার্চ একবুক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন, কিন্তু এরপরই দৃশ্যপট বদলে যায়। সৌদি আরবে পৌঁছার পরেই অত্যাচারের শুরু হয় রিপার ওপর। এক পর্যায়ে প্রাণে বাঁচার তাগিদে জাফলংয়ের পশ্চিম কালিনগর গ্রামে অবস্থান করা স্বামী মো. মুন্নাকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি।

এরপর থেকে স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য দ্বারে দ্বারে অনুনয় বিনয় শুরু করেন স্বামী মুন্না। এরই একপর্যায়ে মুন্নার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে রিপাকে সৌদি আরবে পাঠাতে আগ্রহী হলেও পরে রিপার পরিবারের নারাজির কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় জিন্দাবাজারের ইদ্রিস মার্কেটের হামিদ ট্রাভেলস-এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমদ ব্ল্যাক-মেইলিংয়ের শিকার হয়ে স্ত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে মুন্না বলেন, ‘জিন্দাবাজারের ইদ্রিস মার্কেটের হামিদ ট্রাভেলস-এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমদ সরকারিভাবে বিনাখরচে সৌদিআরবে গৃহকর্মী পাঠানোর কথা বলেন। তার কথা শুনে হামিদ ট্রাভেলস-এর মাধ্যমে রিপাকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ করি। কিন্তু পরে সে চুক্তি বাতিল করতে চাইলে হামিদ ট্রাভেলস-এর পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাাক দাবি করা হয়। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে দেই।’

স্ত্রী রিপাকে সৌদি আরব পাঠাতে হামিদ ট্রাভেলস-এর ভূমিকার ব্যাপারে মো. মুন্না বলেন, ‘হামিদ স্যার অভয় দিলে আমার ২০ বছরের স্ত্রী রিপা বেগমকে বিদেশে পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেই। তার কথামতো পাসপোর্টও তৈরি করি। এরপর ট্রাভেলস-এ পাসপোর্টও জমা দেই। কিন্তু এরমধ্যেই ঘটে বিপত্তি। রিপার পরিবার এতে রাজি হয়নি। পরে রিপার পরিবারের কথামতো হামিদ আহমদকে ফোন করে জানাই- ‘‘রিপা সৌদি আরব যাবে না। তার পরিবার রাজি হচ্ছে না।’’ তখন ট্রাভেলস এর মালিক হামিদ আমার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তিনি আমাকে জেলে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপর তিনি আমাকে ৩ লাখ টাকা না দিয়ে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আমি তাকে জানাই, এ টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তখন তিনি আমাকে বাধ্য করেন আমার স্ত্রী রিপাকে সৌদি আরবে পাঠাতে।’

পুরো বিষয়টি স্ত্রী রিপাকে জানালে সে তার স্বামীকে হামিদ ট্রাভেলস এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমেদ এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজে সৌদি আরব যাওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়। এ ব্যাপারে মুন্না বলেন, ‘রিপাকে এসব বিষয় বলার পর সে আমাকে বাঁচাতে সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’

 

সৌদিতে কেমন আছেন রিপা- এ ব্যাপারে মুন্না বলেন, ‘৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠে রিপা। সেখানে পৌঁছার পর সে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলে আমার সঙ্গে। কিন্তু এরপর থেকে আর রিপার কাছে আর ফোন দেওয়া হচ্ছে না। আমি দেশ থেকে যোগাযোগ করা হলে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় তাকে দেওয়া হয় ৩-৪ মিনিট, কথা বলার সময় শুধু দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে কাঁদতে থাকে রিপা।’

১৭ মার্চ একাধিকবার চেষ্টা করার পর সৌদি আরবে অবস্থানকারী আরেক নারী (কফিল)-এর মাধ্যমে স্ত্রী সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন মুন্না। সেসময় রিপা বেগম স্বামী মুন্নাকে বলেন- ‘তুমি বাড়ির বারা (বাহিরে) কেনে? তোমার সমস্যা অইবো (হবে)। আমি বাংলাদেশে আইতাম (আসতে চাই)। যেলান অয়  (যেভাবে হয়) আমারে দেশে নেও (নিয়ে যাও)। আমারে তারা সবসময় মারে (মারধর করে)। খাবার দেয় না সময়মতো। তুমি বেটিকে (কফিল নারীকে) ফোন দিলে আরও মারে (মারধর করে)। আমারে খারাপ প্রস্তাব দেয় তারা। না হুনলে (শুনলে) মারে। আমারে যেলান (যেসব) কইয়া (বলে) সৌদি পাঠানো অইছে (হয়েছে) ইখানও (এখানে) ইতা (এগুলো) কোনটাই নাই।’  

এ ব্যাপারে হামিদ ট্রাভেলস এর সত্ত্বাধিকারী হামিদ আহমদ বলেন- ‘রিপা বেগম নামের এক গৃহবধূকে আমরা সৌদি আরবে কোনও টাকা ছাড়াই পাঠিয়েছি। সেখানে তিনি ভালো আছেন। স্বামী মুন্না ও রিপার সঙ্গে আমাদের এগ্রিমেন্ট লেখা আছে। প্রতিমাসে ৮শ’ রিয়াল চুক্তিতে তাকে (রিপাকে) গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। এসব ব্যাপারে মুন্নাকে কোনও ধরণের হুমকি কিংবা তার কাছে কোনও টাকা চাওয়া হয়নি।’

রিপাকে সৌদি আরবে নির্যাতন করা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের এসব বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: