ঢাকা | রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
আরবী ভাষায় ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্তি তাই এ রাতকে ‘ভাগ্য-রজনী’ না বলে ‘মুক্তি-রজনী’ বলাসঠিক হবে।

আল্লাহ তাআলা ক্ষমা প্রার্থীদেরকে ক্ষমা করেন আর রহমতপ্রার্থীদেরকে রহমত দানকরেন”।

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:১১

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:১১

#লাইলাতু_বারাআতের_নামায
أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ اللَّيْلِ يُصَلِّي فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ قُبِضَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ ذَلِكَ قُمْتُ حَتَّى حَرَّكْتُ إِبْهَامَهُ فَتَحَرَّكَ، فَرَجَعْتُ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، وَفَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ: " يَا عَائِشَةُ أَوْ يَا حُمَيْرَاءُ ظَنَنْتِ أَنَّ النَّبِيَّ خَاسَ بِكِ؟ "، قُلْتُ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ قُبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ، فَقَالَ: " أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ "، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: " هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ . قَالَ الْأَزْهَرِيُّ: " قَوْلُهُ قَدْ خَاسَ بِكَ يُقَالُ لِلرَّجُلِ إِذَا غَدَرَ بِصَاحِبِهِ فَلَمْ يُؤْتِهِ حَقَّهُ قَدْ خَاسَ بِهِ، " قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ وَاللهُ أَعْلَمُ،
হাদীস নম্বর-৩৬৬ : হযরত আয়েশা রা. বলেন: এক রাতেরসূলুল্লাহ স. নামায আদায় করলেন। তাতে সিজদা এত লম্বাকরলেন যে, আমি ধারণা করলাম রসূলুল্লাহ স.-এর ইন্তিকাল হয়েগেছে। তাই আমি উঠে গিয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর (পায়ের) বৃদ্ধাঙ্গুলনাড়া দিলাম। আর তা নড়ে উঠলো। অতঃপর আমি ফিরে এলাম।পরে যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামায শেষকরলেন তখন বললেন: হে আয়েশা! বা হে হুমাইরা! তুমি কিধারণা করেছ যে, নবী স. তোমার সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি? আমি বললাম: না, ইয়া রসুুলাল্লাহ! স. বরং আপনার লম্বাসিজদার কারণে আমি ধারণা করেছি যে, আপনার ইন্তিকাল হয়েগেছে। রসূলুল্লাহ স. বললেন: তুমি কি জানো, আজকের এ রাতকোন রাত? আমি বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন।তিনি বললেন: এ রাত হলো অর্ধ শা’বানের (লাইলাতুলবারাআত) রাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে সব বান্দার প্রতিবিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদেরকে ক্ষমা করে দেন; রহমতপ্রার্থীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। আর হিংসুকদেরকেতাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন।
ইমাম বাইহাকী রহ. বলেন: এটা উত্তম মুরসাল। হতে পারে আলাবিন হারিস এ হাদীসটি হযরত মাকহুল রহ. থেকে গ্রহণ করেছেন।অর্থাৎ, তখন আর মুরসাল থাকবে না। (শুআবুল ঈমান: ৩৮৫৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মুরসাল। ইমাম বাইহাকী রহ. বলেন: قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ “আমি বলি এটা উত্তম মুরসাল”। আরমুরসাল হাদীসের পক্ষে কোন সমর্থক বর্ণনা থাকলে চার ইমামসহঅনেক নীতিনির্ধারক ইমামের নিকটে সেটা গ্রহণযোগ্য। (শরহুনুখবাতিল ফিকার: মুরসাল হাদীস অধ্যায়) আর এ হাদীসেরপক্ষে বহুসংখ্যক সমর্থক হাদীস রয়েছে এবং অনেক ইমামএটাকে সহীহ বলেছেন। ইমাম বাইহাকী আরও বলেন: وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ “হতে পারে আলা বিনহারিস এ হাদীসটি হযরত মাকহুল রহ. থেকে গ্রহণ করেছেন”।আর মাকহুল হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করে থাকেন। এহিসেবে হাদীসটি তখন আর মুরসালও থাকে না; বরং সরাসরিসহীহ হয়ে যায়।
সারসংক্ষেপ : লাইলাতুল বারাআতে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিশেষ কোননামায নেই। তবে উল্লিখিত হাদীসসহ আরও অনেক হাদীস দ্বারাপ্রমাণ হয় যে, রসূলুল্লাহ স. উক্ত রাতের ইবাদাত বিশেষ আগ্রহ ওযতœসহকারে দীর্ঘ রাকাতে আদায় করতেন। সুতরাং এ রাতেরইবাদাতের ব্যাপারে বিশেষভাবে যতœবান হওয়া উচিত। সাথেসাথে এ হাদীসে রসূলুল্লাহ স.-এর ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে যে, فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، “আল্লাহ তাআলা ক্ষমা প্রার্থীদেরকে ক্ষমা করেন আর রহমতপ্রার্থীদেরকে রহমত দানকরেন”। এ ইরশাদ থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতে আল্লাহতাআলার দরবারে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা উচিত। সুতরাংআল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন এ আশায় বসে না থেকে তাঁরকাছে ক্ষমা চাওয়া ও রহমত চাওয়ার দ্বারা এ রাতের যথাযথব্যবহার হওয়া দরকার।
হাদীসে এ রাতটি ليلة النصف من شعبان বা অর্ধ শা’বানের রাতঅর্থাৎ, ১৪ শাবান দিবাগত রাত হিসেবে পরিচিত। পূর্ববর্ণিতসহীহ হাদীস অনুযায়ী এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকেগুনাহ থেকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেয়ার কারণে মুসলিম সমাজেএ রাতটি ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘মুক্তি-রজনী’ নামে পরিচিতিলাভ করে। এটা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত কোন নাম নয়। ফারসীভাষায় রাতকে ‘শব’ বলা হয়। তাই পারস্যে এটা ‘শবে বারাআত’ নামে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করে।
উল্লেখ্য, যেহেতু আরবী ভাষায় ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্তি, নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি ইত্যাদি; সেহেতু ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘শবেবারাআত’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘মুক্তি-রজনী’। তবে আমাদেরসমাজে শব্দটির অর্থ ‘ভাগ্য-রজনী’ হিসেবেও পরিচিত হলেওআসলে এটা সঠিক নয়। কারণ ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য নয়।তাই আমরা এ রাতকে ‘ভাগ্য-রজনী’ না বলে ‘মুক্তি-রজনী’ বলাসঠিক হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: