odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Sunday, 16th November 2025, ১৬th November ২০২৫
সাফল্য মুখ্যমন্ত্রীর, সাফল্য মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল সংগঠনের, সাফল্য বাংলার মানুষের।

'বাংলা জয়ী, নেত্রী সফল '

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৪ December ২০১৯ ০৮:৪০

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৪ December ২০১৯ ০৮:৪০

 

নেত্রী সফল, বাংলা জয়ী

ফাইল ছবি

দেশের ১৭টি রাজ্যে যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আগুন জ্বলছে, ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন মানুষ, পুলিশের গুলিতে হত অনেকে, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করলেন?‌ কী বললেন?‌ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কোনও চেষ্টা?‌ না। সরাসরি সংখ্যালঘুদের কুকথায় ভূষিত করলেন মোদি। অমিত শাহ উত্তেজক ভাষণ দিয়ে গেলেন। ঝাড়খণ্ডে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে ভোট বাড়ানোর জন্য। দেশের চালক!‌ বাংলার বিজেপি নেতারা চূড়ান্ত প্ররোচনামূলক কথা বলে চলছেন সভায়, টেলিভিশনে। চাইছিলেন, যাতে বিক্ষোভের আগুনে ছাই হতে থাকে রাজ্য, পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় অনেকের, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে ভোটের পেট ভরানো যায়।

আর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কী করলেন?‌ দানবিক আইনের বিরুদ্ধে পথে নামলেন, শান্তি এবং ঐক্যের বার্তা দিতে। দলীয় স্বার্থে নয়, বাংলা ও দেশে সুস্থ পরিবেশ ফেরানোর লক্ষ্যে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যে যতটুকু গণ্ডগোল, তা থামাতে বদ্ধপরিকর। সংখ্যালঘুদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালেননি। কোথাও, একটা ক্ষেত্রেও তাঁর দল যাতে উত্তেজনায় মদদ না দেয়, একটা অপ্রীতিকর ঘটনাতেও যাতে কর্মীরা না জড়ান, তা নিশ্চিত করলেন। অনেককে গ্রেপ্তার করা হল। প্রশাসক হিসেবে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করা এবং দলকে ইতিবাচক পথে চলার নির্দেশ দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখালেন, কী করে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। প্রয়োজনে কঠোর বার্তা। হায় বিজেপি, ব্যাপারটা ‘‌জমল না’‌!‌

দারুণ ভালো একটা দিক। ইমামরা স্পষ্ট বিবৃতি দিলেন, প্রতিবাদ হোক, কিন্তু অশান্তি নয়। ক্ষোভকে হিংসার দিকে নিয়ে যাওয়া নয়। বিজেপি‌র প্ররোচনা চলতে থাকল, কিন্তু সাধারণ হিন্দুরা ফাঁদে পা দিলেন না। সাফল্য মুখ্যমন্ত্রীর, সাফল্য মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল সংগঠনের, সাফল্য বাংলার মানুষের।

চক্রান্ত গভীর। সোশ্যাল মিডিয়াতে কুৎসিত অপপ্রচার বিরামহীন। দুচারটে বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে বিশাল করে দেখানো। এবং দেখানো মানে সত্য নয়, বানানো। দিল্লি-‌বিশাখাপত্তনম রুটে বছরখানেক আগে আগুনে দাউ দাউ জ্বলেছিল ট্রেন, সেই ছবি এবার বাংলার ঘটনা বলে প্রচার। বাংলা জ্বলছে, সরকার ব্যর্থ, সুতরাং উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুদের নিয়ে অশান্তি ছড়াক। ষড়যন্ত্র  ব্যর্থ। ট্রেনে হামলায় ভয়ংকর জখম শিশুর ছবি ছড়ানো হলো। বার্তা, বুঝুন, কী হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের হামলা। একটু খোঁজ নিয়েই জানা গেল, ছবিটা বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত এক শিশুর। মিথ্যা ছড়ানোই চক্রান্তকারীদের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া তাদের হাতিয়ার। 

সারগাছি স্টেশনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র। যাচ্ছিলেন ডোমকলে এক অনুষ্ঠানে। মাথায় টুপি। একটা শুটিংয়ে ব্যবহার করতে হয়েছিল। বাদশার পছন্দ হয়ে যায় এবং মাঝেমাঝেই পরেন। ছড়ানো হল, অশান্তি ছড়াচ্ছেন সংখ্যালঘু নেতা!‌ অন্য রাজ্যের অশান্তির ঘটনাকেও বাংলার বলে চালিয়ে দেওয়া হল। কিছুকাল আগে, বসিরহাটে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর সময়ে একটা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল, মনে আছে?‌ ভোজপুরি সিনেমার দৃশ্য। ঘটনা নয়। ভিন রাজ্যের এক বিজেপি নেত্রীকে সে মিথ্যার জন্য আদালতে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়েছিল। এবারও, একেবারে সাজানো ছবির সঙ্গে জঘন্য প্রচার। সরকার সজাগ এবং বাংলার মানুষ সচেতন। বেচারা বিজেপি!‌

কয়েকটা দিনে কী হয়েছে?‌ কয়েকটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা, প্রধানত রেল স্টেশনে। স্টেশনের নিরাপত্তা এবং রেলের সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব আরপিএফর, কেন্দ্রশাসিত রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের। প্রাথমিক প্রতিরোধও দেখা গেল না। গেল রাজ্য পুলিশ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনল। মাত্রই কয়েকটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা, বহু রুটে বেশ কয়েকদিনের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলো। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ অংশত বিচ্ছিন্ন।  মিছিলে মমতার ক্ষোভ, কেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে ট্রেন?‌ ওদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, রাজ্যবাসীকে উত্তেজিত করা, বুঝে নাও, সংখ্যালঘুদের জন্য, রাজ্য সরকারের জন্য ট্রেন বন্ধ। দুর্গতি বাড়লেই সুবিধা!‌ মমতার অভিযোগ  গ্রহণযোগ্য হলো এবং প্রায় অবিলম্বে অধিকাংশ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। আগের দিন করা যাচ্ছিল না, পরদিন থেকে করা গেল!‌

হায়দরাবাদের দল এআইএমআইএম। তেলেঙ্গানার কিছু আসন। প্রভূত ঐশ্বর্য। কারণটা কী?‌ স্পষ্ট। সংখ্যালঘু সচেতন ভোটাদাতাদের মৌলবাদী প্রচারে বিভ্রান্ত করে ভোট কাটা, যাতে বিজেপির সুবিধা হয়। দিন কয়েক আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পুলিশও সজাগ ছিল। দু‌একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং ইতিবাচক প্রচার চালিয়ে চক্রান্তটা বেশি ছড়াতে দেওয়া হল না। বেশ কিছু টাকাও তো ঢেলেছে। কে দিল?‌ ভোট‌কাটুয়া দল, যারা বিত্তশালী?‌ কিছু ক্ষেত্রে গেরুয়া ষড়যন্ত্র। বাজার থেকে টুপি কিনে কয়েকটা লোককে পরিয়ে দিয়ে হাঙ্গামা করা এবং তার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া। মমতার নেতৃত্বে চক্রান্তের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাংলা।

রাজ্যবাসী দেখলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং দলনেত্রী হিসেবে একইসঙ্গে সফল মমতা। দক্ষ হাতে সামলালেন বিক্ষিপ্ত অশান্তি। পাশাপাশি, নিশ্চিত করলেন যাতে সাম্প্রদায়িক বিরোধ মাথা না তুলতে পারে। নেত্রী সফল, বাংলা জয়ী।

লেখক: অশোক দাশগুপ্ত, আনন্দবাজার



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: