odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 15th November 2025, ১৫th November ২০২৫

পাকিস্তানের কাছে টি-২০ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৬ January ২০২০ ১০:৫৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৬ January ২০২০ ১০:৫৮

 

লাহোর, ২৫ জানুয়ারি ২০২০  : এক ম্যাচ বাকী রেখেই পাকিস্তানের কাছে টি-২০ সিরিজ হেরে বসলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৯ উইকেটে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। গতকাল সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিলো মাহমুদুল্লাহর দল। এই জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিতের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল স্বাগতিকরা।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ম্যাচে দলকে ১১ ওভারে ৭১ রানের সূচনা এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাইম। এবার আর দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি তারা। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হন নাইম। শুন্য রানে বিদায় নেন গতকাল ৪৩ রান করা নাইম।
নাইমের বিদায়ের উইকেটে আসেন প্রায় দু’বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মেহেদি। পিঞ্চ হিটার হিসেবে মাঠে নামেন সদ্য সমাপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলে ব্যাট হাতে তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি করা মেহেদি। আজ প্রথম ছয় বল থেকে মাত্র ১ রান নিতে পারেন তিনি। তবে সপ্তম বলে পাকিস্তানের ইমাদকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন মেহেদি।
তবে বড় ইনিংস খেলার আভাসও দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন মেহেদি। ১২ বলে ৯ রান করে পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ হাসনাইনের বলে আউট হন তিনি। থামেন তিনি। ফলে ২২ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পাওয়ার প্লেতে ৩৩ রানে তুলতে পারে টাইগাররা। পাওয়ার প্লের পর প্যাভিলিয়নে ফিরেন চার নম্বরে নামা লিটন দাস।
পাকিস্তান স্পিনার শাদাব খানের বলে লেগ বিফোর আউট হন লিটন। বাঁচার জন্য রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আম্পারয়াস কলে বিদায় নিতে হয় ১৪ বলে ৮ রান করা লিটনকে।
দলীয় ৪১ রানে লিটনের বিদায়ে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন আফিফ হোসেন। বড় জুটির লক্ষ্যে সর্তকতার সাথে খেলতে থাকেন তারা। তবে উইকেটে সেট হবার পর দ্রæত রান তোলায় মনোযোগ দেন তামিম ও আফিফ।
১০ম ওভারে শাদাবকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন আফিফ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকা তামিম ১৫তম ওভারের প্রথম বলে লেগ বিফোর আউট হন। বোলার ছিলেন হাসনাইন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁেচ যান তামিম। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ বলে আফিফকে বিদায় দেন হাসনাইন। ২০ বলে ২১ রান করেন আফিফ। চতুর্থ উইকেটে ৪২ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন তামিম-আফিফ।
আফিফকে হারানোর পর টি-২০ ক্যারিয়ারে সপ্তম ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তামিম। বাউন্ডারি মেরে ৪৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। হাফ-সেঞ্চুরির পর দ্রæত রান তোলার চেষ্টা করেন তিনি। তিনটি চারে নিজের স্কোরকে ষাটের ঘরে নিয়ে যান তামিম। তবে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে থামতে হয় তাকে। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে রান আউট হন তামিম। ৫৩ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা নিজের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসটি সাজান তামিম। প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ৩৯ রান করেছিলেন এ ওপেনার।
তামিমের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দেয়ার দায়িত্ব পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু আজ ব্যর্থ হলেন তিনি। শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়া টাইগার দলপতি ১২ বলে ১২ রান করেন। শেষ পর্যন্ত সৌম্য সরকারের ৫ বলে অপরাজিত ৫ ও আমিনুল ইসলামের ৪ বলে ২টি চারে অপরাজিত ৮ রানে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের হাসনাইন ২০ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের ১৩৭ রানের সহজ লক্ষ্যের জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার আহসান আলিকে হারায় পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচের মত এবারও পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। আহসানকে রানের খাতা খুলতে দেননি তিনি।
আহসানের বিদায়ে উইকেটে বাবরের সঙ্গী হন মোহাম্মদ হাফিজ। দ্রæত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন বাবর। তার ১১ বলে ২৩ রানের সুবাদে পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রান পায় পাকিস্তান।
পাওয়ার প্লে’র পরও ঝুঁকি নেননি বাবর-আজম। তাই ১০ ওভার শেষে ৬৮ রান পায় পাকিস্তান। তবে এরপরই মারমুখী রুপ নেন হাফিজ। পরের তিন ওভারে ৫টি চারে ৩৯ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। এ সময় বাবরের রান ছিলো ৩২ বলে ৪৩।
তবে ১৪তম ওভারে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানকে ছক্কা মেরে হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে যান বাবর। ৩৪ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরির পূর্ণ করেন পাকিস্তানের দলপতি।
বাবরের হাফ-সেঞ্চুরির পর হাফিজকে বিদায়ের সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ। মুস্তাফিজের বলে হাফিজের ক্যাচ ফেলেন লিটন। তাই জীবন পেয়ে বাবরের সাথে অবিচ্ছিন্ন থেকে পাকিস্তানের ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন হাফিজ।
আফিফের করা ১৬তম ওভার থেকে ১৬ রান নেন বাবর ও হাফিজ। শেষ পর্যন্ত ২০ বল বাকী রেখেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা। ৪৪ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় বাবর অপরাজিত ৬৬ ও ৪৯ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় হাফিজ অপরাজিত ৬৭ রান করেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৯০ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৩১ রান যোগ তারা। বাংলাদেশের শফিউল ৩ ওভারে ২৭ রানে ১ উইকেট নেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারি একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল রান আউট (ইমাদ) ৬৫
মোহাম্মদ নাইম ক রিজওয়ান ব আফ্রিদি ০
মেহেদি হাসান ক রিজওয়ান ব হাসনাইন ৯
লিটন দাস এলবিডবøু ব শাদাব ৮
আফিফ হোসেন ক রউফ ব হাসনাইন ২১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব রউফ ১২
সৌম্য সরকার অপরাজিত ৫
আমিনুল ইসলাম অপরাজিত ৮
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-১, ও-৫) ৮
মোট (২০ ওভার, ৬ উইকেট) ১৩৬
উইকেট পতন : ১/৫ (নাইম), ২/২২ (মেহেদি), ৩/৪১ (লিটন), ৪/৮৬ (আফিফ), ৫/১১৭ (তামিম), ৬/১২৬ (মাহমুদুল্লাহ)।
পাকিস্তান বোলিং :
ইমাদ ওয়াসিম : ২-০-১৬-০ (ও-১),
শাহিন শাহ আফ্রিদি : ৪-০-২২-১ (ও-১),
মোহাম্মদ হাসনাইন : ৪-০-২০-২ (ও-১) (নো-১),
হারিস রউফ : ৪-০-২৭-১ (ও-১),
শাদাব খান : ৩-০-২৮-১,
শোয়েব মালিক : ২-০-৯-০,
ইফতেখার আহমেদ : ১-০-১২-০।
পাকিস্তান ইনিংস :
বাবর আজম অপরাজিত ৬৬
আহসান আলি ক মাহমুদুল্লাহ ব শফিউল ০
মোহাম্মদ হাফিজ অপরাজিত ৬৭
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৩) ৪
মোট (১৬.৪ ওভার, ১ উইকেট) ১৩৭
উইকেট পতন : ১/৬ (আহসান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মেহেদি : ৪-০-২৮-০,
শফিউল ইসলাম : ৩-০-২৭-১ (ও-১),
আল-আমিন হোসেন : ৩-০-১৭-০ (ও-১),
মুস্তাফিজুর রহমান : ৩-০-২৯-০ (ও-১),
আমিনুল ইসলাম : ২-০-১৬-০,
আফিফ হোসেন : ১-০-১৬-০,
মাহমুদুল্লাহ : ০.৪-০-৩-০।
ফল : পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বাবর আজম (পাকিস্তান)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে পাকিস্তান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: