odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Sunday, 16th November 2025, ১৬th November ২০২৫
করোনাভাইরাস

ভারতে লকডাউনে তিনদিন ধরে পাহাড়ে-জঙ্গলে হেঁটে বাড়ির কাছে এসে মারা গেল ১২ বছরের বালিকা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২২ April ২০২০ ০১:৪৩

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২২ April ২০২০ ০১:৪৩

 

ভারতে লকডাউনের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকরা হাঁটছেন গ্রামের দিকেভারতের নানা প্রান্তেই লকডাউনের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকরা হাঁটছেন তাদের গ্রামের দিকে - ফাইল ছবি

ভারতে লকডাউনের মধ্যে তিনদিন ধরে পায়ে হেঁটে চলার পর ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুরে ১২ বছর বয়সী একটি মেয়ে মারা গেছে।

দরিদ্র পরিবারের ওই মেয়েটি পাশের রাজ্য তেলেঙ্গানার একটি মরিচ ক্ষেতে কাজ করত। কিন্তু লকডাউন শুরুর পর আর কাজকর্ম না থাকায় সে ১৫০ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনে নানা ধরনের নানা ট্র্যাজেডির যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, হয়তো এটি ছিল তার সর্বশেষ উদাহরণ।

দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের খাদ্যের গুদাম যখন উপছে পড়ছে, তখনও তাদের এই মর্মান্তিক পরিণতি চরম দুর্ভাগ্যজনক।

জামলো মাকদামের কথা

ছত্তিশগড়ের আদিবাসী-অধ্যুষিত ও নকশাল উপদ্রুত বিজাপুর জেলার এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ছিল জামলো মাকদাম।

নিজেদের গ্রামে বিশেষ রোজগারপাতি নেই বলেই মাত্র ১২ বছরের এই মেয়েটি গ্রামের অন্যদের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিল পাশের রাজ্য তেলেঙ্গানায়।

সেখানে লঙ্কা বা মরিচের ক্ষেতে কাজ করত মেয়েটি, তবে বাবা-মা ছিলেন নিজেদের গ্রামেই।

লকডাউনে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জামলো আরও ১১ জনের সঙ্গে তাদের গ্রামের পথে হাঁটতে শুরু করে গত ১৫ই এপ্রিল।

তিনদিন পরে ওই দলটি যখন নিজেদের গ্রাম থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে – তখন অসহ্য যন্ত্রণায় রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ে জামলো মাকদাম।

বিজাপুরের জেলা প্রশাসক কে ডি কুঞ্জাম জানাচ্ছেন, "বাচ্চা মেয়েটি আগে থেকেই খুব দুর্বল ছিল – আর এত দীর্ঘ পথ চলার ধকলও সম্ভবত নিতে পারেনি।"

"ফলে মাঝ রাস্তাতেই ভান্ডারপাল গ্রামের কাছে ওর মৃত্যু হয়।"

মি. কুঞ্জাম বলেন, "আমাদের ছত্তিশগড়ের সঙ্গে পাশের রাজ্যগুলোর সীমানা কিন্তু সম্পূর্ণ সিল করা – কিন্তু তারপরও লকডাউনে না-খেতে পাওয়ার ভয়ে এই শ্রমিকরা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে, পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেভাবে হোক ফিরতে মরিয়া।"

রাজ্য সরকার জামলোর পরিবারের জন্য এক লক্ষ রুপির ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।

অবরুদ্ধ ভারত

অনিন্দিতা অধিকারীঅনিন্দিতা অধিকারী

মাসখানেক আগে ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের মধ্যকার অভিবাসী শ্রমিকদের যে ভুখা মিছিল শুরু হয়েছে, মনে করা হচ্ছে জামলো মাকদাম সেই ট্র্যাজেডির সবশেষ শিকার।

সমাজতাত্ত্বিক ও অ্যাক্টিভিস্ট অনিন্দিতা অধিকারী বলছেন, এই ট্র্যাজেডির বীজ কিন্তু নিহিত ছিল সরকারের নীতিতেই – আর তা লকডাউনের অনেক আগে থেকেই।

মিজ অধিকারী বিবিসিকে বলেন, "এই জীবনধারণের সঙ্কট কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর আরম্ভ হয়নি। এটা আসলে অনেক পুরনো – আর তার কারণ হল আমাদের দেশে সামাজিক সুরক্ষার বলয়টা খুবই দুর্বল।"

"আমরা যারা এই সব ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, তারা কিন্তু বহু বছর ধরেই বলে আসছি যদি দারিদ্র দূরীকরণে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো না হয় এবং জিডিপি-র আরও বেশি পরিমাণ অর্থ উন্নয়ন খাতে খরচ না করা হয়, তাহলে আমরা কিন্তু বেশির ভাগ প্রান্তিক মানুষকে রক্ষা করতে পারবো না।"

অনিন্দিতা অধিকারী আরও বলেন, "ফলে বলা যেতে পারে এটা একটা অনেক পুরনো সমস্যা – আর এখন এই লকডাউন এই মানুষগুলোকে একেবারে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।"

"গত কদিনে যত অভিবাসী শ্রমিক আমাদের ফোন করেছে, তারাও সবাই বলেছে হাম তো কামাতে হ্যায়, খাতে হ্যায়! - মানে যা উপার্জন সবটাই খেতে লেগে যায়, হাতে পয়সা এতটুকুও বাঁচে না।"

অর্থাৎ অভিবাসী শ্রমিকদের এই ভঙ্গুর জীবনধারায় ন্যূনতম সঞ্চয়টুকু নেই বলেই দেড় মাসের লকডাউনে কী খাব – এই ভয়টাই তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু সরকারি ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার গুদামে যখন খাদ্যশস্য উপছে পড়ছে, তারপরও কেন এই অনাহারের আশঙ্কা?

অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজঅর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ

ভারতের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ এর কারণ হিসেবে "কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে টানাটানি"কে দায়ী করেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "কেন্দ্র চাইছে, রাজ্যগুলো এই খাদ্যশস্য দাম দিয়ে কিনুক। আর রাজ্যগুলো চায় বিনা পয়সায় সেটা পেতে।"

"রাজ্যগুলোর কথায় যুক্তিও আছে, কারণ এই উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য বিলি করতে পারলেও কেন্দ্রের গুদামের খরচ বাঁচে – আর রাজ্যগুলোর হাতেও নগদ টাকা নেই।"

"তারপরও ভারতে রাজ্যগুলো কেন্দ্রের দয়ার ওপরই নির্ভরশীল – আর কেন্দ্রও প্রতি কেজি কুড়ি টাকা করে না পেলে এই খাদ্যশস্য ছাড়তে রাজি নয়!", আক্ষেপের সুরে বলছিলেন মি. দ্রেজ।

এই অচলাবস্থা দ্রুত না-মিটলে ভারত যে আগামী দিনে আরও মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির সাক্ষী হবে এবং আরও অনেক জামলো মাকদাম খবরে জায়গা করে নেবে – বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এখন থেকেই তা নিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন।

BBC 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: