odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

চাপটা ইংল্যান্ডকেই দিলেন মাশরাফি

Admin 1 | প্রকাশিত: ১ June ২০১৭ ১৪:৩৮

Admin 1
প্রকাশিত: ১ June ২০১৭ ১৪:৩৮

‘ট্রফি থেকে আপনি কতটা দূরে?’
মাশরাফি বিন মুর্তজা হাসলেন, ‘এক হাত!’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা টেবিলের ওপর রাখা। সেটি থেকে আসলেই হাতখানেক দূরে বসে সংবাদ সম্মেলন করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

উত্তরটা রসিকতা। কিন্তু বাংলাদেশের ওই সাংবাদিকের প্রশ্নটা তো তা নয়। সেটি মাশরাফিদের কাছে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার প্রমাণ। এমন প্রত্যাশা, কখনো কখনো যা যুক্তি মানে না।

মাশরাফির নিজেরও সেটির সঙ্গে ভালোই পরিচয় হয়ে গেছে এত দিনে। কাল দুপুরে ওভালের সংবাদ সম্মেলনেও প্রসঙ্গটা বেশ কয়েকবার ঘুরেফিরে এল। এক ইংলিশ সাংবাদিকও বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে জানতে চাইলেন। যেটির উত্তর দিতে গিয়েও হাসি ফুটেছে মাশরাফির মুখে, ‘প্রত্যাশা তো অনেক। দেশের মানুষ মনে করে, আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেই ফিরব।’

এর আগেই অবশ্য প্রত্যাশার চাপটা ইংল্যান্ডের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন, ‘ইংল্যান্ডের ওপর চাপ অনেক বেশি। নিজেদের দেশে খেলা, তার ওপর গত কিছুদিন যেভাবে খেলছে, তাতে ওদের ফেবারিট বলায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। দুই দলের ওপরই চাপ আছে, তবে ওদের ওপর সেটি বেশি।’

টুর্নামেন্টে যারা ফেবারিট, বাংলাদেশের বিপক্ষেও তো তাদেরই ফেবারিট হওয়ার কথা। তা মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই মাশরাফির। বারবারই বললেন, নিজেদের দিনে বাংলাদেশ যেকোনো দলকে হারাতে পারে। তবে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের কথা বললেন আরও বেশি। একজন প্রশ্ন করলেন, স্টোকস, বাটলার, রুট—এই তিনজনের মধ্যে কাকে বেশি বিপজ্জনক মনে করেন? মাশরাফি এই তিনজনের সঙ্গে আরও বেশ কটি নাম যোগ করে দিলেন।

কদিন আগেই বিরাট কোহলি বলেছেন, ইংল্যান্ডের এই দলে দুর্বল কোনো দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। মাশরাফিও এর সঙ্গে একমত। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধাটাও যোগ করে দিলেন সঙ্গে, ‌‘ওরা নিজেদের মাঠে খেলবে। কোন মাঠে কত রান হয়, কোথায় কত রান তাড়া করা যায়, সবই ওদের জানা।’‌

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে এত ভালো ভালো কথা থেকে শিরোনাম করা কঠিন বলেই কিনা, বাংলাদেশের এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কেন সরাসরি বলতে পারছেন না যে, আমরা ইংল্যান্ডকে হারাব?’ মাশরাফির চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল, ‘আমি ওই রকম মানুষ নই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা হলেও আমি ওই কথা বলতাম না। বলতাম, জানি না কী হবে!’

আজ যে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ, সেখানেই ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। দলের ব্যাটসম্যানরা এই ব্যর্থতা থেকে শিখেছে বলেই মাশরাফির আশা। তবে এটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেও রাজি নন, ‘এটা না হলেই ভালো ছিল। অবশ্যই আমরা এটা চাইনি। তবে এটির কথা বেশি না ভেবে এর আগের পাঁচটি ম্যাচের দিকে তাকাতে চাই। ওগুলোয় আমরা ভালো ব্যাটিং করেছি। আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ খুব ভালো। ওদের বিপক্ষেও তিন শ করেছি।’

আইসিসি টুর্নামেন্টে খুব ভালো উইকেট থাকে। এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তা-ই থাকার কথা। যে কারণে রানের বন্যা বইবে বলেই সাধারণ ধারণা। প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘এটা খুব হাইস্কোরিং টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে।’ মাশরাফিরও একই ধারণা। তবে ইংল্যান্ডে ব্যাটিংটা যে শুধুই উইকেটের ওপর নির্ভর করে না, সেটির প্রমাণ ভালোই পেয়েছেন ওই প্রস্তুতি ম্যাচে। ‘এত দিন শুনে এসেছি, ইংল্যান্ডে আকাশ মেঘলা হলেই ব্যাটিং কঠিন হয়ে যায়। তবে নিজে তা আগে দেখিনি। এদিন যা দেখলাম। আকাশে মেঘ করার সঙ্গে সঙ্গে বল সুইং করতে শুরু করল!’

ওভালের উইকেটকে ইংল্যান্ডে সবাই ব্যাটিং-স্বর্গ বলে জানে, এই কথা শুনে তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘তার মানে তো আর এটা নয় যে, আমরা নামলেই তিন শ করে ফেলব।’ তামিমের কথার মর্মার্থ প্রস্তুতি ম্যাচ ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে এটাও, উইকেট যত ভালোই হোক, আকাশ কেমন থাকবে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। উপমহাদেশের অন্য দলগুলোর মতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও সুইং বলে দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আজ তাই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের জন্যও প্রার্থনা থাকবে বাংলাদেশের। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যদিও সেটি পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় ছুড়ে দিচ্ছে।

সুইং বলে সমস্যাটা শুধুই উপমহাদেশীয় ব্যাটসম্যানদের বলা অন্যায় হচ্ছে। এই জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা ইংলিশ ব্যাটসম্যানরাও তো লর্ডসের একটু সবুজ উইকেটেই কেমন হাবুডুবু খেলেন! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই ম্যাচের পর এউইন মরগান তো উইকেট নিয়ে প্রবল অসন্তুষ্টিও জানিয়েছেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘ভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নেওয়াটা শিখতে হবে।’

ইংল্যান্ডে খেলা, আর ইংল্যান্ড অধিনায়কই এ কথা বলছেন! এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের আসল চ্যালেঞ্জটাও এতে জানা হয়ে যাচ্ছে!

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড

ওয়ানডেতে মুখোমুখি

         ম্যাচ বাংলাদেশ ইংল্যান্ড

মোট     ১৯     ৪       ১৫

ইংল্যান্ডে ৬      ১        ৫

দলীয় সর্বোচ্চ

বাংলাদেশ

২৮৮, মিরপুর, ২০১৬

ইংল্যান্ড

৩৯১/৪, ট্রেন্ট ব্রিজ, ২০০৫

দলীয় সর্বনিম্ন

বাংলাদেশ

১৩৪/৯, ঢাকা, ২০০৩

ইংল্যান্ড

২০৪, মিরপুর, ২০১৬

সবচেয়ে বেশি রান

বাংলাদেশ

৪২০, ইমরুল কায়েস

ইংল্যান্ড

৬১০, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস

সবচেয়ে বেশি উইকেট

বাংলাদেশ

১৫, মাশরাফি বিন মুর্তজা

ইংল্যান্ড

১২, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ও টিম ব্রেসনান

সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস

বাংলাদেশ

১২৫, তামিম ইকবাল, মিরপুর, ২০১০

ইংল্যান্ড

১৫৪, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, এজবাস্টন, ২০১০

সেরা বোলিং

বাংলাদেশ

৪/২৯, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মিরপুর, ২০১৬

ইংল্যান্ড

৬/৩১, পল কলিংউড, ট্রেন্ট ব্রিজ, ২০০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: