
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে এসকেলেটর, টেলিপ্রম্পটার ও সাউন্ড সিস্টেমের ধারাবাহিক বিপর্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষোভ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, এটি নিছক কাকতালীয় নয় বরং একটি ট্রিপল সাবোটাজ। প্রশ্ন হলো, আসলেই কি এটি ষড়যন্ত্র নাকি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার একটি ধারাবাহিক চিত্র? বুধবার জাতিসংঘ সদরদফতরে প্রবেশকালে প্রথম অস্বস্তিকর ঘটনার মুখোমুখি হন ট্রাম্প দম্পতি। এসকেলেটরে পা রাখতেই সেটি হঠাৎ থেমে যায়। নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিলেও ঘটনাটি তাৎক্ষণিক আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর সাধারণ পরিষদের বক্তব্য দেওয়ার সময় হয় আরেক বিপত্তি, টেলিপ্রম্পটার কাজ করছিলো না। ট্রাম্প নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যিনি টেলিপ্রম্পটার চালাচ্ছেন তিনি বড় সমস্যায় আছেন। পরে এটি চালু হলেও বক্তৃতার একটি বড় অংশ বাধাগ্রস্ত হয়। তৃতীয় বিপত্তি ঘটে অডিটোরিয়ামের শব্দব্যবস্থায়। ট্রাম্পের অভিযোগ করেন, অনেক বিশ্বনেতা সরাসরি বক্তৃতা শুনতে পারেননি, কেবল অনুবাদ শোনার ইয়ারপিস ব্যবহারকারীরাই বুঝতে পেরেছেন বক্তব্য।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। জাতিসংঘে তিনটি খুবই ভয়াবহ ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ঘটেছে। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের কাছে চিঠি পাঠানোর ঘোষণা দেন এবং এসকেলেটর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তা ও মর্যাদার ওপর হুমকি সহ্য করবে না। তবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দ্যুজারিক অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।তার দাবি, ট্রাম্পের ভিডিওগ্রাফার হয়তো এসকেলেটরের সেফটি ফাংশন অনিচ্ছাকৃতভাবে সক্রিয় করেছিলেন। টেলিপ্রম্পটার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে। তারা নিজস্ব ল্যাপটপ ব্যবহার করে সেটি যুক্ত করেছিলেন জাতিসংঘের সিস্টেমে। অডিও সমস্যার ক্ষেত্রেও জাতিসংঘের বক্তব্য স্পষ্ট সাউন্ড সিস্টেমটি অনুবাদনির্ভর। যারা ইয়ারপিস ব্যবহার করেননি, তাদের কাছে বক্তব্য স্পষ্ট না শোনার সম্ভাবনা ছিল।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, তিনি প্রায়শই বিতর্কিত পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নির্বাচনী বছরে এমন অভিযোগ তার সমর্থকদের কাছে বিশ্বব্যবস্থা বনাম ট্রাম্প ধারণাটিকে আরও জোরালো করতে পারে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের ব্যাখ্যায় যুক্তি আছে, কারণ ঘটনাগুলোতে সরাসরি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি। এসকেলেটর, টেলিপ্রম্পটার এবং অডিও সিস্টেম সবই বিভিন্ন পক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। একটি আন্তর্জাতিক ফোরামে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একদিনে তিনটি প্রযুক্তিগত বিপত্তি নিছক কাকতালীয় হলেও কূটনৈতিক অঙ্গনে এটি নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর বার্তা দিয়েছে। ট্রাম্পের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষ। তবে এ ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল যে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার মঞ্চে প্রযুক্তিগত সামান্য ত্রুটিও রাজনৈতিক ঝড় তুলতে পারে। এটি কেবল একটি টেকনিক্যাল ব্যর্থতা, নাকি কূটনৈতিক ষড়যন্ত্র তা সময়ই বলে দেবে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)
ট্রাম্প জাতিসংঘ দুর্ঘটনা ট্রাম্প জাতিসংঘ দুর্ঘটনা এসকেলেটর টেলিপ্রম্পটার বিপর্যয় জাতিসংঘে প্রযুক্তি বিপর্যয় ট্রাম্প ট্রিপল নাশকতা তদন্ত দাবি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: