odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫
সাহানা সেলিমের নারীসমাজ এর দৈন্যতা নিয়ে কবিতা

কৃষ্ণকলি

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৩ March ২০১৯ ১৯:৪৭

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৩ March ২০১৯ ১৯:৪৭

া____________আমি "কৃষ্ণকলি"
সাহানা
১৩/০৩/১৯ইং

আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সাধারণ এক মেয়ে,,
নাম আমার কৃষ্ণকলি,এম, এ ডিগ্রী ধারী,
গায়ের রং কালো, পড়াশোনায় ভালো,
বয়স যখন ষোল,
তখনই বাবা আমায় বিয়ে দিয়ে দিলো।,
আমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী- প্রবাসী,
মুখ থেকে আমার শব্দ বেরুলো না কিছু,
তবু অসহায়,চোখ দুটি
বলতে চেয়েছে অনেক কিছু।
আমায় প্রথম দেখতে এলো
আমার কাকার বন্ধু, বয়সে বাবার কাছাকাছি,
বলেছে," মেয়ে আমার দেখা,
ছোটবেলায় অনেক দেখেছি।"
আমি যার কোলে খেলেছি,
সেই কাকার বন্ধু হবে আমার বর,,
রাগে শোকে আমি যে গড় গড়
মা বলে,, "বর একটু বয়সী হলে ভালো।"
তবু মুখ আমার বললো না কিছু।

বিয়েটা ভাঙ্গলো, যে কোন কারন বশতঃ,
তখনও মুখ আমার বন্ধ।
এবার কৃষ্ণ কলি পড়ায় মনোযোগ দিলো।
এম, এ ডিগ্রী নিলো।
এরই,মাঝে একজনার সাথে প্রেম হলো।
ছেলেটি বেশ,ভালো
গায়ের,বর্ণ কালো।
খুব করে ধরলো,
"বিয়েটা,এবার সেরে ফেলবো,, কি বলো?"
কৃষ্ণকলি আমি,, কেমন করে বলি -
আমি তোমার যোগ্যা নই,
আমায় তুমি ভালোবাসবে, বিয়ে করবে না।
আমি যে মধ্যবিত্ত ঘরের অলক্ষুণে এক মেয়ে।
একদিন জানলো সব, প্রেমিক পুরুষটি,,
আমিই জানালাম তাকে,
তারপর আর যোগাযোগ করলো না,
পরে জানিয়ে দিল,
"তোর মতো প্রতারনাকারীকে বিয়ে না করাই শ্রেয়"
আর কি হলো,
তা,আজো রইলো অজানা।
চোখ আমার বলেছে তখনও অনেক কিছু,
কিন্তু মুখ কিছু বললো না।

এম, এ,ডিগ্রি আমার কোন কাজে এলোনা।
বাড়ীর সকলে সাফ জানিয়ে দিলো
কোন চাকরি করা চলবে না।
ভাই বলে,"আগেই বলেছি,
মেয়েদের এত পড়াশুনার ভালো না,
বিয়েই তো হয়ে যাবে।"
একজন দ্বোজবরের সাথে আমার বিয়ে হলো,,
বলে রাখা ভালো -
এবারের বরটি আগের বরের চেয়েও বয়সে বেশী,
আমার বাবার চেয়েও বেশি, মায়ের চেয়েও বেশি,
পঞ্চম শ্রেণি পাশ, পেশায় ঠিকাদারি।
তার ডিগ্রির তেমন প্রয়োজন ছিলোনা।
কিছু দিন পর,
আমার ঘর আলো করে পুত্র সন্তান এলো,
বুকে নিয়ে আমার মা হওয়ার স্বাধ মিটলো।
আমি কৃষ্ণ কলি, এম, এ ডিগ্রীধারী,
শুধু নই,একজন মা ও।
কারো বউ,কারো মেয়ে, কারো বোন।

স্বামী বিয়োগান্তে-
দেবরের কুদৃষ্টি আমার উপর পড়ে
কারনে অকারনে হুটহাট করে,
চলে আসে আমার ঘরে।
দজ্জাল জা বুঝতে পারে।
তাইতো বিদায় করলো আমায়,
কোন এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে,
চোখ আমার বলেছে অনেক কিছু
মুখ বরাবরের মতো নিচু।

সন্তান বুকে নিয়ে
এলাম ফিরে বাপের ঘরে।
এটা ঘর বললে ভুল হবে,
তবু ও ঠাই তো হলো।
আজ বাবা নেই, মা আছে
পরের সংসারে পরে আছে মুখবুজে।
বয়স আমার চল্লিশোর্ধ্ব,
তাই ডিগ্রীর প্রয়োজন ফুরালো।
কোথাও কোন চাকরি না পেয়ে
পড়ে রইলাম ঘরের এক কোনে,
কোনমতে ভাইয়ের বউয়ের ঝিয়ের কাজ করে।
রাতে হাজারো বায়নার ছলে,
ভাবী আমায় তাড়িয়ে দিতে বলে।
ভাই সুহৃদ বটে,
বলে ঝি চাকর কি আর সহজে জোটে,
থাক না ঘরের এক কোনে পড়ে।
আমি কৃষ্ণ কলি, এম এ ডিগ্রি ধারী।
সন্ধ্যায় সেলাই মেশিনটা নিয়ে বসি,
পাড়ার কয়েকজন ভাবী আসে
আমার কাছে কাপড় সেলাতে।
ছোটছোট ২ টি বাচচা,আসে পড়তে
এই দিয়ে ছেলে আমার পড়ছে,
উচচ মাধ্যমিকে পড়ছে
ভালো জ্ঞানে গুনে।
রাতের বেলায়,ভাইয়ের ৫ তলা প্রাসাদের
একতলার মেঝেতে বিছানা পেতে
মা ছেলে দিব্যি চলছে।

একদিন হঠাৎ মনে হলো কিছু লিখি,
কাগজ কলম নিয়ে বসলাম,
দু 'এক কলম লিখলাম
লিখতে লিখতে লেখার মাঝে ডুবে যেতে চাইলাম।
নিজের কথা লিখি,
দেশ,নারী,ফুল, প্রকৃতি, প্রেমের কথা লিখি।
একদিন আমার ছেলে বলে উঠলো,
এ বয়সে কি শুরু করলে মা,
তোমার কি মানায় কাগজ কলমে থাকা,
জায় নামাযে বসো অবসরে,
এসব কি, লোকে কি বলে!
এসব করলে, সমাজ বলে তো আছে কথা।
এই,টুকুন একটা বাচ্চা ছেলে আমায়,শাসন করে,
আমি কাগজে কলমে থাকলে সমাজের কি ক্ষতি,
জানতে চেয়েছি, তবু মুখ আমার বলেনি কিছু।
চোখ বলেছে অনেক কিছু।

আমি কৃষ্ণ কলি, এম, এ ডিগ্রি ধারী,
কাগজে কলমেও আমার বাধা,
কবিতা লিখায়,বাধা
লাল টিপ পড়ায় বাধা,
এলো খোপায় একখানা লাল গোলাপ এঁটে দিতে বাধা।
এম,এ পাশের পর চাকুরি করতে বাধা।
প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যেতে বাধা।
স্বামীর বাড়িতে থাকতে বাধা।
ভাইয়ের আশ্রিতা হতে বাধা।
তখনো চোখ আমার বলেছে অনেক কথা,
মুখ তবু বরাবরের মতোই বোবা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: