odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Sunday, 16th November 2025, ১৬th November ২০২৫

আমাজনে আগুন ও বন ধ্বংস করার মধ্যে সম্পর্ক

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৮ August ২০১৯ ০১:৩৫

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৮ August ২০১৯ ০১:৩৫

 

২১শে অগাস্ট তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আংশিকভাবে বন উজাড় করা এলাকা থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে২১শে অগাস্ট তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আংশিকভাবে বন উজাড় করা এলাকা থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে

আমাজনে দাবানলের ঘটনা বাড়ার বিষয়টি বন উজাড় করার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত - নতুন এক গবেষণায় এমনই দাবি করেছে আমাজন এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও ব্রাজিলের ফেড্যারাল ইউনিভার্সিটি অব একর।

যে দশটি মিউনিসিপালিটি এলাকায় বন উজাড় করার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, প্রত্যেকটি এলাকাই এবছরের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হওয়া স্থানগুলোর অন্তর্ভূক্ত।

বন উজাড় করা আর দাবানলের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের খরা থেকে আগুনের সূত্রপাতের তত্ত্বটিকে আবার ভুল হিসেবে ধরে নিতে হয়।

গবেষণাটিতে আরো উঠে আসে যে শুষ্ক মৌসুমে এরকম ব্যাপকভাবে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সাথে খরার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা সামান্যই, যেখানে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার খরার তীব্রতা কম।

গবেষণায় উদ্ধৃত করা হয়, "সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আগুনের ঘটনা যে দশটি মিউনিসিপালিটিতে হয়েছে, সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় বন উজাড় হয়েছে। ২০১৯ সালের আগুনের ৩৭% হয়েছে এই দশটি স্থান থেকে, আর এবছরের জুলাই পর্যন্ত মোট উজাড় করা বনের ৪৩% হয়েছে এসব এলাকাতে। নতুন করে বৃক্ষহীন হওয়া ও কিছুটা খরায় ভুগতে থাকা এলাকায় দাবানলের ব্যাপকতা আগুনের চরিত্রের একটি বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে। সেটা হল কোন এলাকা বৃক্ষহীন করে ফেললে সেটা নতুন ওই এলাকাকে জ্বালিয়ে দেয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে।"

গবেষকরা তিনটি আলাদা সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের বন উজাড় করার তথ্য এবং বছরের শুরু থেকে অগাস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত হওয়া দাবানলগুলোর তথ্য আমলে নেয়া হয়েছে গবেষণাটিতে।

গবেষণাতে দাবি করা হয়, "২০১৯ সালে আমাজনে যে পরিমাণ আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা শুধু শুষ্ক মৌসুমের কারণে নয়। অধিকাংশ রাজ্যেই আগুনের ঘটনা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হয়েছে। অগাস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৩২ হাজার ৭২৮টি, যা একই সময়ে গত তিনবছরের গড়ের চেয়ে প্রায় ৬০% বেশি।"

 

রাতে তোলা ছবিতে হুমাইতার কাছে আমাজন জঙ্গলের আগুনরাতে তোলা ছবিতে হুমাইতার কাছে আমাজন জঙ্গলের আগুন

এদিকে বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেন যে আমাজনে বন উজাড় করার হার বেড়েছে এবং তিনি দাবি করেন যে 'আমাদের আমাজনকে পুড়িয়ে দেয়ার মতো অপরাধ' দমন করার উদ্দেশ্যে কাজ করছেন তিনি।

তবে দাবানল যে পৃথিবীতে স্বাভাবিক একটি বিষয়, সেটিও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো।

"বনে আগুন লাগে, এটি সাধারণ বিষয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে হয়, ব্রাজিলেও হতে পারে। এখানে হলে কি কোনো অপরাধ? আমি জানি না কৃষকরা, এনজিওরা নাকি আদিবাসীরা এই আগুনের পেছনে রয়েছে। অন্যান্য দেশের স্বার্থ রয়েছে এর পেছনে। এরকম ঘটনা ঘটলে তারা বলতে পারে যে, তোমরা সঠিক কাজটা করছো না।"

"তারপর কে জানে, কয়েকদিন পর আমাজন অঞ্চলেরও ওপরও কেউ হস্তক্ষেপ করে কিনা।"

রবিবার টুইটারে ব্রাজিলের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী রিকার্ডো সালেস মন্তব্য করেন জলবায়ু পরিস্থিতির কারণেই আগুনের ঘটনা বাড়ছে।

"শুকনো আবহাওয়া, বাতাস ও তাপের কারণে সারা দেশে আগুন লাগার হার বৃদ্ধি পেয়েছে", বলে তিনি মন্তব্য করেন টুইটারে।

ইমাফ্লোরা ইন্সটিটিউটের গবেষক লুইস ফার্নান্দেো গুয়েদেস পিন্টো দাবি করেন, আগুন সংক্রান্ত বর্তমান তথ্য যাচাই করলে বোঝা যায় যে আমাজনে জায়গা নিয়ে বিরোধের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আগুন লাগার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

"জায়গা নিয়ে বিরোধের কারণেই এই আগুনের ঘটনা ঘটছে। এলাকা পরিষ্কার করা ও দখল করার উদ্দেশ্যে আগুন লাগানো হয়েছে। কাগজে কলমে জমির মালিকানা পরবর্তীতে পরিবর্তন করার উদ্দেশ্য নিয়েই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।"

লুইস ফার্নান্দো বলছেন এর আগে জাইর বোলসোনারো এবং একরের গভর্নর গ্ল্যাডসন কামেলি'র মত নেতাদের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে যারা বন ধ্বংস করে তাদের শাস্তির বিধান কিছুটা শিথিল করা হতে পারে।

এই শাস্তি কমানোর বিষয়টির সাথে এবছরের আগুন লাগার মাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে বলে দাবি করেন লুই ফার্নান্দো।

"এই আগুনগুলো এমন একটি পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে যার ফলস্বরুপ কারো কোনো শাস্তি হবে না বলে এর আগেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তারা।"

জলবায়ুর কারণেই আগুন বেশি লাগছে - বাহিয়া রাজ্যে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীর এমন এক বক্তব্যের প্রতিবাদ করে সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষজলবায়ুর কারণেই আগুন বেশি লাগছে - বাহিয়া রাজ্যে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীর এমন এক বক্তব্যের প্রতিবাদ করে সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষ

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কার্রোস নোবরের মতে, বন উজাড় করা এবং আগুনের মধ্যে সম্পর্ক যে রয়েছে, তা আগে থেকেই অনুমান করা হয়ে আসছিল।

যারা সাধারণত বনের একটি অংশ 'পরিষ্কার' করতে চায়, তারা শুরুতে গাছ কেটে পরে ঐ এলাকায় আগুন লাগিয়ে দেয়।

বিবিসি ব্রাজিলকে মি. নোবরে বলেন, "শুরুতে বনের গাছ কাটা, পরে মাসখানেক অপেক্ষা করা এবং সবশেষে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়া - এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই সাধারণত অবলম্বন করা হয়।"

"গাছ কাটার পরের দিনই আগুন লাগিয়ে দিলে আগুন ছড়াবে না, কারণ তখনও সেখানকার উদ্ভিদকুল অনেকটাই সবুজ থাকে। তাই আগুন লাগার জন্য অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়। আর প্রতিবছরই অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আগুনের সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি।"

"এবছর সব সংস্থা থেকে পাওয়া নির্দেশক অনুযায়ী বন উজাড় বেশি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, কাজেই আগুন লাগার হারও বেশি হবে তা ধারণা করা যাচ্ছিল", বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্রোস নোবরে।

বিবিসি 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: