odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 15th November 2025, ১৫th November ২০২৫
ফসিল জ্বালানির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ঐক্যের বার্তা নিয়ে বেলেঁমে রাস্তায় হাজারো প্রদর্শনকারী। অ্যামাজন, জীববৈচিত্র্য ও আদিবাসী অধিকার রক্ষায় COP শীর্ষ সম্মেলনের বেলেমে বৈশ্বিক প্রতিবাদ।

ফ্রি দ্য অ্যামাজন স্লোগানে মুখর বেলেম : COP30 সম্মেলনে বিক্ষোভ

Special Correspondent | প্রকাশিত: ১৫ November ২০২৫ ২২:২০

Special Correspondent
প্রকাশিত: ১৫ November ২০২৫ ২২:২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ব্রাজিলের বেলেম শহর COP30 জলবায়ু সম্মেলনের আগে এক বিরাট মানবস্রোতে পরিণত হয়েছে। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ marching sound system এর তালে তালে “ফ্রি দ্য অ্যামাজন”স্লোগান উত্তাল হয়ে ওঠে শহরের প্রধান সড়ক। মিছিলে দেখা যায় তেল, কয়লা ও গ্যাস লেখা তিনটি বিশাল কফিন যা বয়ে নিয়ে প্রতিবাদকারীরা প্রতীকীভাবে ফসিল ফুয়েল শিল্পের মৃত্যু দাবি করেন। দুই পাশে দাঁড়ানো গ্রিম রিপার সজ্জিত কর্মীরা জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। ইন্ডিজেনাস সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত চোখে পড়ার মতো। The answer is us লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নারী-পুরুষ-যুবকরা অ্যামাজন রক্ষার প্রত্যয়ে মিছিলে স্লোগান তুলেন। অনেকেই Demarcation Now দাবি জানান যার অর্থ তাদের পূর্বপুরুষের ভূমির আইনগত স্বীকৃতি চাই। বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যামাজনের শত শত আদিবাসী গোষ্ঠীই বনরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর শক্তি। তাদের অংশগ্রহণ মিছিলকে আরও বিশ্বজনীন করে তোলে। সামোয়ার তরুণ জলবায়ু কর্মী ব্রিয়ানা ফ্রুয়ান বলেন, ফসিল ফুয়েল এখনো জ্বলছে। আমরা জলবায়ু সংকটের সামনের সারির মানুষ। এত COP এর পরও ন্যায়বিচারের দাবিতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। ব্রাজিলভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন 350-এর কর্মী ইলান জানান জলবায়ু ন্যায়বিচারের লড়াই বিশ্বব্যাপী হবে এটাই আমাদের বার্তা। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ছোট ছোট সিস্টার প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। COP30 এর আগেই বেলেমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে কারণ মঙ্গলবার কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে সম্মেলন ভেন্যুতে ঢুকে পড়লে দুই নিরাপত্তাকর্মী সামান্য আহত হন। বেলেমের উত্তর প্রান্তে COP30 এর আনুষ্ঠানিক আলোচনাও চলমান। প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। তবে প্রথম সপ্তাহে তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবুও কিছু দেশ জোর দিচ্ছে ফসিল ফুয়েল থেকে সরে আসার অতীত প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে একটি সম্মিলিত রোডম্যাপ তৈরিতে। আয়োজক দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এই সম্মেলনের জন্য বেলেমকে বেছে নিয়েছেন বিশ্বকে অ্যামাজনের গুরুত্ব দেখানোর উদ্দেশ্যে। তাঁর আশা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এখান থেকেই নতুন কার্যকর সিদ্ধান্তের সূচনা হবে।

COP30 সম্মেলনে কী?

COP30 দ্বারা বোঝানো হয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) এর অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০তম “Conference of the Parties” অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের ৩০তম আসর। এখানে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, পরিবেশকর্মী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা একত্র হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সংক্ষেপে COP30 সম্মেলনে যা হয়:

 ১. জলবায়ু পরিবর্তন কমানোর বৈশ্বিক পরিকল্পনা: দেশগুলো আলোচনা করে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়। ফসিল ফুয়েল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়া যায়। পরিবেশবান্ধব নীতিমালা তৈরি করা যায়।

 ২. ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের সিদ্ধান্ত: জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলো কী পরিমাণ টাকা দেবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়।

৩. অ্যামাজন, বন, সাগরসহ পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ: বিশেষভাবে বন রক্ষা, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে বৈশ্বিক চুক্তি হয় বা নতুন প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়।

৪. বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণা উপস্থাপন করেন: জলবায়ু সংকটের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান তুলে ধরা হয়।

৫. তরুণ, আদিবাসী ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা: COP এ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আদিবাসী প্রতিনিধি ও যুব কর্মীরাও নিজেদের দাবি–দাওয়া ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

৬. রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র: সম্মেলনের শেষে দেশগুলো একটি চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র (Final Decision / Agreement) প্রকাশ করে যেখানে সংশ্লিষ্ট বছরের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী বছরের লক্ষ্য নির্ধারণ থাকে।

-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: