odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

ফেসবুকে ভারতকে পানি গ্যাস ও বন্দর দেয়ার ‘বিরোধিতা’ করেছিলেন ‍বুয়েট ছাত্র ফাহাদ

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৭ October ২০১৯ ১৯:৫১

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৭ October ২০১৯ ১৯:৫১

 
 

রহস্যজনক মৃত্যুর ৮ ঘণ্টা আগে ভারতকে সমুদ্র বন্দর, পানি ও গ্যাস দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় ওই স্ট্যাটাসের পর রোববার মধ্যরাতে ফাহাদের মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার।

স্ট্যাটাসে ফাহাদ লেখেন, ‘৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

ভারতকে গ্যাস দেয়ার সমালোচনা করে বুয়েটের এই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রফতানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।’

স্ট্যাটাসের শেষ তিনি কবি কামিনী রায়ের একটি কবিতা জুড়ে দিয়ে বলেন, হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-

‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

প্রসঙ্গত রোববার দিনগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা হলের নিচতলা থেকে ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল।

ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১ এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শের-ই বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

ফাহাদের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফাহাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালকেই বিকালে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে উঠে। তারপর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।

হল প্রভোস্ট মো. জাফর ইকবাল খান বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি।

‘পরে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

চকবাজার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ আমাদের ফোন করে বিষয়টি জানায়। পরে আমরা গিয়ে শের-ই বাংলা হলের বাইরে নিচতলা থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসি।

ফাহাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আঘাত কোনো অস্ত্রের নয়। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেয়া হয়েছে। কেন এত রাতে সে বাইরে গিয়েছিল, তা কেউ বলতে পারেনি।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় সহপাঠীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

চকবাজার থানার ওসি সোহরাব হোসেন ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

যুগান্তর 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: