
বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র সূচনা;
বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র সূচনা হয় ১৯৯৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী। তখনকার সাপ্তাহিক ‘যায়যায় দিন’ পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান তার পত্রিকার মাধ্যমে এই দিবসকে বাংলার যুব সমাজের কাছে সর্ব প্রথম তুলে ধরে। ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রতিবেদন বের করে। তখনই সর্ব প্রথম বাংলার মানুষ এই ভ্যালেন্টাইন’স বা ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর মিডিয়া আর ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে এই দিবস অবৈধ প্রেম-ভালবাসা প্রকাশের এক নোংরা আর অশ্লীল সংস্কৃতির রূপ লাভ করেছে।
কে এই শফিক রেহমান?! দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত শফিক রেহমান পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিল। বিশেষত আশির দশকে এরশাদের শাসনামলে দীর্ঘ ছয় বছর লন্ডনে নির্বাসিত ছিল। সে সময় সে ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য সংস্কৃতির মত এই নোংরা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এবং ১৯৯২ সালে দেশে এসে তার সাপ্তাহিক পত্রিকাকে জনপ্রিয় করা এবং এই অশ্লীল সংস্কৃতিকে যুব সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ সালে ‘যায়যায় দিনে’র বিশেষ প্রতিবেদন বের করে। এরপর থেকে অবৈধ ভালবাসার এই নোংরা সংস্কৃতিকে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ‘মৌচাকে ঢিল’ ম্যাগাজিন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘লাল গোলাপ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সংস্কৃতির প্রচার করে আসছে। আজ বাংলাদেশে তাকে ভালবাসা দিবসের জনক হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।
অনুতাপের বিষয় হচ্ছে, ইউরোপ থেকে উপকার হতো এমন কিছু না এনে, "সূদুর প্রসারী প্রভাব" না বুঝে (বা বুঝে) এই মহাজ্ঞানী (!) নিয়ে এলেন তাদের আচার-আনুষ্ঠানিকতা। প্রচলন ও প্রসার করলেন আমাদের সামাজিক এবং দেশীয় স্বংস্কৃতির বিপরীত "তথা কথিত ভালোবাসা দিবস" পালনের নামে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের।
আর ধর্মীয় কারনে আতঙ্ককর বিষয় হল, শফিক রেহমান বাংলাদেশে পাপ ও অন্যায়ের এমন এক দ্বার উন্মোচন করেছে, যার গোনাহ কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় জমা হতে থাকবে। বাংলাদেশে যত মানুষ এই দিবস পালন করবে, যত যুবক এই দিবসে যত গোনাহ করবে সকল গোনাহের সমপরিমাণ গোনাহ শফিক রেহমানের আমালনামায় যোগ হতে থাকবে। অনেকটা চেইন রিএ্যাকশনের মত। কিয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে এবং পরিধি ব্যপকতা লাভ করতেই থাকবে। এই সম্পর্কে এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা. এরশাদ করেন-
مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَمِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ وِزْرُهَا وَمِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ
অনুবাদ- “যে ব্যক্তি অনুকরণীয় ভাল কোন কাজের সূচনা করবে, সে এই কাজের প্রতিদান তো পাবেই, এমনকি যারা তার অনুসরণ করে এই কাজ করবে তাদের আমলের প্রতিদানের অংশও সে পাবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি অনুসরণযোগ্য কোন মন্দ কাজের সূচনা করবে, সে ঐ মন্দ কাজের শাস্তি তো ভোগ করবেই, পাশাপাশি তার এই পথ অনুসরণ করে যারা এই মন্দ কাজে লিপ্ত হবে তাদের মন্দ কাজের শাস্তিও সে ভোগ করবে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ-২০৭)
আফসোস হয় এসকল শফিক রেহমানদের জন্য। যারা দুনিয়াতে হিরো হওয়ার জন্য, মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এমন এমন মন্দ কাজের সূচনা করে যাচ্ছে, যার ভোগান্তির শেষ নেই। কিয়ামতের দিন নিজের অপরাধের বোঝ নিয়েই মানুষ পেরেশান থাকবে। ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি জপতে থাকবে, সেখানে যদি আরো হাজার হাজার মানুষের পাপের বোঝা নিতে হয় তাহলে তো মুক্তির কোন সম্ভাবনাই থাকে না।
আল্লাহ আমাদের মাফ করুন
আমাদেরকে হেফাজত রাখুন।
# সংগৃহীত
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: