odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

সুর নরম করছে উত্তর কোরিয়া?

MASUM | প্রকাশিত: ১৬ August ২০১৭ ১৯:১৪

MASUM
প্রকাশিত: ১৬ August ২০১৭ ১৯:১৪

কিম জং-উন


গুয়ামে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা পিছিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন। যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তা আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে চান এই একনায়ক। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এ খবর জানা গেছে।

দ্য ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার কিম জং-উন সেনাবাহিনীর প্রতি এক নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনায় গুয়ামে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনাটি আবার পরীক্ষা করার কথা বলেছেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তিনি (কিম জং) বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোরীয় উপদ্বীপে বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে।’

গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া বলেছিল, গুয়ামে তারা চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেছে। গুয়ামে হামলার এই হুমকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা চরমে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সতর্কতা জারি করে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে যেকোনো সময় যেকোনো হামলা থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই কূটনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার মিত্রশক্তি চীন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন আজ মঙ্গলবার বলেছেন, সিউলের সম্মতি ছাড়া কোনো সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। আর তাঁর সরকার যেকোনো ধরনের যুদ্ধ প্রতিহত করবে। ১৯৪৫ সালে জাপানের সামরিক শাসন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা উদ্‌যাপনের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক পদক্ষেপের ব্যাপারে একমাত্র দক্ষিণ কোরিয়াই সিদ্ধান্ত নেবে, অন্য কেউ নয়। সরকার যুদ্ধ ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’

এদিকে আগামী সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি পিয়ংইয়ংকে আরও ক্ষুব্ধ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন নিয়মিতই এ ধরনের যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে উত্তর কোরিয়াকেও তাদের অস্ত্র কর্মসূচি থামানোর কথা বলছে দেশটি।

চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন মহড়া নিশ্চিতভাবেই পিয়ংইয়ংকে আরও প্ররোচিত করবে। দেশটি আরও উগ্রভাবে এর জবাব দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদি দক্ষিণ কোরিয়া সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধ না চায়, তবে অবশ্যই সামরিক মহড়া বন্ধ করা উচিত।’

কাগজে-কলমে অবশ্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধেই আছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ, ১৯৫০ থেকে ৫৩ সাল পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধ শেষ হয়েছিল সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে, কোনো শান্তিচুক্তি এখনো পর্যন্ত হয়নি।

অন্যদিকে যদি উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েই দেয়, তবে তা যাবে জাপানের আকাশপথ দিয়েই। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আজ মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আলাপচারিতায় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে দুই পক্ষই একমত হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় মিত্র দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প।

অবশ্য অনেকে বলছেন, উত্তর কোরিয়ার এই হুমকি-ধমকি নেহাতই লোক দেখানো! সিউলের কিউংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ কিম দং-ইউব বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। উত্তর কোরিয়াকে যাঁরা ভালোভাবে চেনেন না, তাঁরা প্রতিবারই এই ফাঁদে পড়বেন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন যে উত্তেজনা প্রশমনে তাঁরা কাজ করছেন। কিন্তু এসব আমরা আগেও দেখেছি।’

দ্য ইনডিপেনডেন্ট ও রয়টার্স অবলম্বনে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: