odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 15th November 2025, ১৫th November ২০২৫

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই পুনর্বাসনে রেজুলেশন গৃহীত

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৭ November ২০১৮ ১২:৩৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৭ November ২০১৮ ১২:৩৬

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সদস্য দেশসমূহের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথভাবে আনীত একটি রেজুলেশন গতকাল গৃহীত হয়।
১৪২টি দেশ এই রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ এবং ভোট প্রদানে বিরত থাকে ২৬টি দেশ। ওআইসি ও ইউ’র পক্ষে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া এই রেজুলেশন পেশ করে। ওআইসি ও ইইউ’র সকল সদস্যরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকোসহ মোট ১০৩টি দেশ এই রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।
এতে বলা হয়,রেজুলেশনটি ভোটে যাওয়ার আগে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওআইসির পক্ষে তুরস্ক ও ইইউ’র পক্ষে অস্ট্রিয়া বক্তব্য রাখে। তুরস্ক ও অস্ট্রিয়ার বক্তব্য সমর্থন করে রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দানের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে দেওয়া বক্তব্যে প্রায় সকল সদস্য দেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের অবদানের কথা উল্লেখ করে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে রেজুলেশনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এই রেজুলেশনকে সমর্থন করতে সদস্য দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এবং মিয়ানমারের ছাড়পত্র অনুযায়ী কিছু রোহিঙ্গা পরিবার ও সদস্যদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কাজ গত ১৫ নভেম্বর শুরু করতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনভাবেই আস্থা রাখতে পারেনি এবং একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত হয়নি। তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ব্যতীত মিয়ানমারে ফিরে যাবেনা। অতএব রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা বিধানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবশ্যই মিয়ানমারে বাধাহীন প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে”।
রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের নীতিগত অবস্থানের কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবারও মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ধরে রাখা বা জোর করে ফেরত পাঠানো এর কোনটিতেই একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ নেই।
উল্লেখ্য গত বছর সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ওআইসির আহ্বানে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে একই বিষয়ে রেজুলেশন গৃহীত হয় যা পরবর্তীতে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে পূনরায় পাস হয়। সে সময় তৃতীয় কমিটির এই রেজুলেশনে ১৩৫টি দেশ পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল এবং ভোট প্রদানে বিরত ছিল ২৬টি দেশ। গত বছর সাধারণ পরিষদ গৃহীত রেজুলেশন অনুযায়ী মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আওতায় মিয়ানমার সংক্রান্ত স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন, কাচিন ও সান প্রদেশে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাবলীর বিবিধ প্রমান ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারজুকি দারুসমান এ রিপোর্টের উপর সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জোরালো সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।
এবছরের এই রেজুলেশন মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগ আরও এক বছরের জন্য বর্ধিত করাসহ তাঁর কাজকে আরও বেগবান করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও এতে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম কার্যকলাপের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি জোরালোভাবে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং সে উদ্দেশ্যে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের যথাযথভাবে প্রত্যাবাসন বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই রেজুলেশনে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ হতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের চেয়েও বেশী ভোটে এবারের রেজুলেশন পাস মিয়ানমারের বিপক্ষে বিশ্ব জনমতের অধিকতর জোরালো অবস্থানেরই সুস্পষ্ট প্রতিফলন। তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এই রেজুলেশন আগামী ডিসেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। এই রেজুলেশন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চলমান মিয়ানমার সঙ্কটের সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো প্রত্যাশা।-খবর বাসসের



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: