odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

 কে হচ্ছেন আ.লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক

| প্রকাশিত: ১৮ April ২০২২ ১০:০৩


প্রকাশিত: ১৮ April ২০২২ ১০:০৩

চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  মেয়াদ শেষেই ক্ষমতাসীন দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার এমন ঘোষণার পর দলটির রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে।

গত ২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর মাঝে সদস্যসংগ্রহ বই বিতরণ অনুষ্ঠানে কাদের বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ২২তম জাতীয় সম্মেলনে আলোচনার বাইরে থাকবে সভাপতি পদটি। এই পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই দীর্ঘ সময়ের নেতৃত্বের কারণে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দলটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগকে চান দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকরা। যার ফলে এই পদে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। 

তবে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের চায়ের টেবিলে এখন প্রধান আলোচনা এবং গুঞ্জনই হচ্ছে আগামী সম্মেলনে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন।  আলোচনা ও গুঞ্জনের প্রধান ইস্যুই হচ্ছে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়ে। কেউ বলছেন, ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করবেন। আবার কেউ বলছেন, দলে একজন ব্যক্তির টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কোন নজির নেই। সেদিক বিবেচনায় সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। তাইতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের।

মূলত শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বপদ থেকে বাদ পড়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। দুইবার নির্বাচিত হওয়া ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পালনে অনেকটাই সফল। তবুও তার বিদায়ের গুঞ্জন থাকায় আলোচনায় উঠে এসেছে এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতার নাম। যারা যারা ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দাপটের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ ও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা এবার দলের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান। 

ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের নাম বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের নাম। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও আছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায়। 

তারা সবাই দলের সাধারণ সম্পাদক হতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান জানান দিতে দিবস ভিক্তিক ও নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। যোগ দিচ্ছেন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও। সকাল-বিকাল নিয়ম করে ধানমন্ডিস্থ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজিরা দিচ্ছেন।

বসে নেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও। তারা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লেখালেখি শুরু না করলেও প্রতিদিন বাসাবাড়ি ও ব্যক্তিগত অফিসে হাজিরা দিচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিগুলোতে আগের থেকে আনাগোনা বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। তাদের টার্গেট জাতীয় সম্মেলনের আগে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা এবং ওই নেতাদের হাত ধরে দলের স্থান করে নেয়া।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সৎ, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত, দলের জন্য নিবেদিত, পরিশ্রমী, মেধাবী, পরীক্ষিত ও দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে থেকে যেকোনো নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হতে পারে। বিশেষ করে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার স্বার্থে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে এমন কাউকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হবে, সারা দেশে তার পরিচিতি ও ক্লিন ইমেজ রয়েছে। দলের নেতা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রনে আগামী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবীন ও প্রবীণের সম্মিলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটিতে তারুণ্যের নতুন রক্ত সঞ্চালন করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরির প্রধান উপায় হচ্ছে কাউন্সিল। একমাত্র কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব তুলে আনা সম্ভব। কাউন্সিলর দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চারও অংশ। দেশের অভ্যন্তরে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগই সঠিক সময়ে দলের জাতীয় কাউন্সিল করে এবং সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনে। সেই সম্মেলনে নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। 

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, দলের নীতি-আদর্শের কাছে আপসহীন, দুর্দিন ও দুঃসময়ের পরীক্ষিত— কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করা হবে এবং দলের গতি বৃদ্ধি পাবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: