odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

স্বামীর কথায় 'নাচতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানে মাথা ন্যাড়া' করে দেয়া হয়েছে যে নারীর

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৬ April ২০১৯ ২২:১৭

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৬ April ২০১৯ ২২:১৭

আসমা আজিজ
অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জনগণের সাহায্য চান আসমা আজিজ

স্বামী এবং তার বন্ধুদের সামনে নাচতে অস্বীকৃতি জানানোয় পাকিস্তানের এক নারীকে শারীরিক নির্যাতন এবং মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।

সে নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন।

এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর পাকিস্তানে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে।

লাহোরের আসমা আজিজ সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে তার ন্যাড়া মাথা এবং চোট পাওয়া মুখমণ্ডলের চিত্র উঠে এসেছে।

আসমা আজিজের স্বামী মিয়া ফয়সাল এবং তার একজন ভৃত্যকে পুলিশের জিম্মায় নেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত মি. ফয়সাল স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক টুইট বার্তায় লিখেছে যে এই ধরণের ঘটনা রোধে 'কাঠামোগত পরিবর্তন' জরুরি।

White space

যেভাবে জানা যায় ঘটনাটি

২৬শে মার্চ পোস্ট করা ভিডিওতে মিজ আজিজ অভিযোগ করেন যে দুইদিন আগে নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

স্বামীর আদেশ অনুযায়ী স্বামীর বন্ধুদের সামনে নাচতে অস্বীকৃতি জানালে ঐ বন্ধুদের সামনেই তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

লাহোরের অভিজাত ডিফেন্স হাউজিং অথরিটি অঞ্চলের একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে।

মিজ আজিজ বলেন, "সে (স্বামী) তার কাজের লোকদের সামনেই আমার কাপড় খুলে নেয়। আমার মাথা ন্যাড়া করার সময় কাজের লোকরা আমাকে ধরে রেখেছিল। চুল কাটার পর সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।"

"আমার কাপড় রক্তাক্ত হয়ে ছিল। আমাকে একটি পাইপের সাথে বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সে আমাকে নগ্ন করে ঝুলিয়ে রাখার হুমকি দিয়েছিল।"

মিজ. আজিজ জানান তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিল করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে।

তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে যে, মিজ আজিজ থানায় জানানোর পরপরই তার বাসার দিকে পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়, কিন্তু তার বাসা তালাবন্ধ ছিল এবং ডিফেন্স হাউজিং অথরিটির কর্তৃপক্ষ তাদের ঢুকতে বাধা দেয়।

মিজ আজিজের পোস্ট করা ভিডিওটি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শেহরেয়ার আফ্রিদির চোখে পড়ার পর তিনি পুলিশকে অভিযোগ দাখিল করার নির্দেশ দেন এবং তারপর পুলিশ এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।

পরদিন অভিযুক্ত মি. ফয়সাল এবং তার এক ভৃত্য রাশিদ আলিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে করা একটি মেডিকেল রিপোর্টে মিজ আজিজের হাত, গাল এবং বাম চোখের কাছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং ফোলা ভাব পাওয়ার উল্লেখ ছিল।

এই ঘটনায় মামলা করার ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারায় মামলা দায়ের না করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কঠোর আইনের অধীনে মামলা করার পরামর্শ দেন মিজ আজিজের আইনজীবী।

বুধবার লাহোর পুলিশের কাছে দাখিল করা কাগজপত্রে আইনজীবীরা দাবি করেন যে এই ঘটনায় সমাজে 'অস্থিরতা এবং উদ্বেগ' ছড়িয়ে পড়েছে।

গত সপ্তাহে পুলিশকে মি. ফয়সাল বলেন মাদকের প্রভাবে তার স্ত্রী নিজের চুল কাটতে শুরু করেন এবং তিনি নিজেও মাদক সেবন করে তার স্ত্রীর কাজ শেষ করতে সহায়তা করেছেন কেবল।

এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক রোষ তৈরি হয়। পাকিস্তানে পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি নিয়েও অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

সামাজিকভাবে রক্ষণশীল পাকিস্তানে নারী অধিকারের বিষয়টি বহুবছর ধরেই বিভিন্ন রকম কোন্দল এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

জাতিসংঘের ২০১৬ সালের লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে ১৮৮টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল ১৪৭ তম।

নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের রেকর্ড অসন্তোষজনক।

নারী ও মেয়ে শিশুদের সাথে সহিংসতার ঘটনা ঘটে অহরহ।

এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলেন পরিসংখ্যান দিয়ে এই সমস্যা কতটা প্রকট তা বোঝা সম্ভব নয়; কারণ এমন অনেক ঘটনার ক্ষেত্রেই কখনো অভিযোগ করা হয় না।

পাকিস্তানে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া নারী দিবসের পদযাত্রার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছিল কিছু রক্ষণশীল দল। পরে সামাজিক মাধ্যমে আয়োজকদের অনেককে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়।

 

bbc



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: