odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫
 ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

কোলন ক্যান্সার নিরাময়ে হোমিও সমাধান

odhikar patra | প্রকাশিত: ৯ September ২০১৯ ০৬:০৪

odhikar patra
প্রকাশিত: ৯ September ২০১৯ ০৬:০৪

ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি।ক্যান্সার নামটা ভয়ংকর সৃষ্টিকারী।ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমার কিছু না বললেও চলে,বর্তমান সমাজে,বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনের মধ্যে এই ভয়ংকর রোগে জীবন দান করেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না। যুদ্ধ,প্লাবন ও দুর্ভিক্ষ,সমাজ জীবনে সাময়িকভাবে আসে আবার চলে যায়, বহু জীবন ধ্বংস করে, কিন্তু এই  বিধ্বংসী রোগ ক্যান্সার ক্রমাগত মানব সমাজকে ধ্বংসের দিগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে ও আর ও বড় বড় মনীষী এর ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়েছেন।গত দুই যুগ ধরে এ রোগে যত রোগী মৃতুবরন করেছেন,কোন যুদ্বেও এত লোক জীবনাহুতি দেয়নি, এই রোগে মানুষের দুঃখ কষ্ট ও জীবননাশের কোন হিসাব নেই।রাখা সম্ভবও নয়।অসহায় মানুষ অনবরত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে।স্বামী-হারা , স্ত্রী, স্ত্রীহারা-স্বামী, পিতৃ মাতৃহারা শিশু, জীবনের অর্জিত সম্পদ ভেসে যাওয়া ক্যান্সার এই সব দুঃখ কষ্টের কারণ।এর একমাএ কারণ -রোগ ও এই রোগের উৎপত্তি কারণ সস্বন্ধে অজ্ঞতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে ও অজ্ঞতা।ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বা মানুষকে রক্ষা করার একমাএ পথ হল রোগের কারণগুলি বিশ্লেষণ করা।আর আজকের বিষয় হলো কোলন ক্যান্সার, এই বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন,বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা.এম এ মাজেদ বলেন...  

 কোলন ক্যান্সার পরিপাকতন্ত্রের বৃহদন্ত্রের এক প্রকার টিউমার বা ক্যান্সার। রেকটামে আক্রান্ত হলে তখন তাকে রেকটাল ক্যান্সার বলে। 
কোলন-রেকটাল ক্যান্সার অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে নিরাপদ টিউমার যেমন পলিপ দিয়ে শুরু হয়,তার পর পলিপ ধীরে ধীরে এডেনোমায় রুপান্তরিত হয়। আর এই এডেনোমা পরবর্তিতে ক্যান্সারে রুপ নেয়।
নব্বই ভাগ কোলন ক্যান্সার ৫০ বছরের পর দেখা যায়। বাকী দশ ভাগ ৫০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় অধিকাংশ কোলন ক্যান্সারের কোন উপসর্গ না থাকায় রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে আসে না।   
ক্যান্সার এমন এক ব্যাধী যা মানবদেহের যেকোন অংশকে আক্রমণ করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষাষায় বৃহদান্তের ক্যান্সারকে বলা হয় বাওয়েল বা কোলন ক্যান্সার ক্ষুদ্রান্তের তুলনায় বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের হার অনেক বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে নারী-পুরুষ উভয়েরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। আমাদের দেশেও ইদানিং এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
কোলন ক্যান্সার কি?
বৃহদান্ত্রে যখন কোষ বিভাজনের নির্দিষ্ট ধারা ভঙ্গ হয় এবং কোষগুলো অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে কোলন ক্যান্সার বলে। বেশিরভাগ কোলন ক্যান্সারই বিভিন্ন ধরনের পলিপ এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির -এর ফল। প্রথমে বৃহদন্ত বা অ্যাপেডিক্সের ক্ষুদ্রাকার কোষীয় পিন্ডে পলিপ তৈরী হয়। ধীরে ধীরে পলিপ থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ করে।
কোলন ক্যান্সারের কারন:
পরিবেশ ও জিনগত কারণে বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম ( বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।
এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লক্ষণসমূহ:
১. তীব্র পেটব্যথা
২. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
৩. পেটের ভিতর থেকে খাবার উগড়ে আসা
৪. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
৫. হঠাৎ ওজনহ্রাস
৬. রক্তশূন্যতা
৭. জন্ডিস
কলোরেকটাল ক্যান্সারের উপসর্গ
১. মলদ্বারে রক্ত ক্ষরণ অর্থাৎ পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া রেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বলে সন্দেহ করে চিকিৎসা করা হয়।
২. মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন। যে রোগী পূর্বে স্বাভাবিক দৈনিক মলত্যাগ করত। এ রোগ হলে তার কনসটিপেশন বা পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া, অল্প পায়খানা হওয়া।
আবার কখনো কখনো মিউকাস ডায়রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে সকাল বেলা।
৩. পেটে ব্যথা, বমি (ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন) ইত্যাদি ইমারজেন্সী উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে।
৪. পেটে চাকা বা টিউমার নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারে।
৫. দূর্বলতা, রক্তশূন্যতা ও খাবারের অরুচি ইত্যাদি নিয়েও ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৬. খাদ্য নালীর বাহিরে এই রোগ অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন- লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে।
কোলন ক্যান্সার রোগ নির্নয় পদ্ধতিঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব এবং চিকিৎসার মাধ্যমে উক্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোলনোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমে উক্ত রোগের অস্তিত্ত্ব সহজেই নির্ণয় করা যায়।আর হোমিওপ্যাথি হলো লক্ষণের উপর নির্ভর।
হোমিও সমাধানঃক্যান্সার চিকিৎসা ক্ষেএে চিকিৎসককে ৩ টি অবস্থার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে, হবে এবং এই ৩ টি অবস্থার জন্য রোগী লক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি ও তদনুযায়ী করতে হবে,প্রথমাবস্থা,ক্যান্সার মায়াজম বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়ে যে সমস্ত শিশু জন্মগ্রহন করেছেন এবং নানা প্রকার অস্বাভাবিক লক্ষণ সমুহ শিশু কাল থেকে প্রকাশ পাচ্ছে।দ্বিতীয়বস্থা,যুবক অবস্থায় বংশগতভাবে ক্যান্সার মায়াজম প্রাপ্ত হয়ে অনেক কষ্টকর উপসর্গে যখন ভুগতে থাকেন তখন চিকিৎসককে ঐ একই পদ্ধতিতে লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে।তৃতীয়অবস্থা,যখন ক্যান্সার রুপটি প্রকাশ পেয়েছে তা সে দেহের অভ্যান্তরে কোন যন্ত্রেই হোক বা বাহিরে কোন অঙ্গেে প্রকাশিত হোক,এই অবস্থাটির চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ক্যান্সারের শ্রেণীভেদ,যন্ত্রভেদ এবং জীবনীশক্তি অবস্থাভেদে এর আরোগ্য সম্ভাবনা অনেকখানি নির্ভর করে।
হোমিওচিকিৎসাঃরোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয়, তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকে রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে  কোলন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক বৃন্দ প্রাথমিক ভাবে যেই ব্যবহার করে থাকেন,  এলুমিনা,নাই এসি,রুটা,সিপিয়া,আর্জেন্ট না,কার্বো ভে,কেলি কার্ব,লাইকো,ফাইটোলাক্কা,নাক্স,কারসোনিস,সালফার,মেডো সহ আরো অনেক ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে,তাই মেডিসিন নিজে নিজে ব্যবহার না করে বিশেষজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।     
 
লেখক,
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কো-চেয়ারম্যান,হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
 সহসাধারণ সম্পাদক,চট্টগ্রাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কল্যান সোসাইটি, কেন্দ্রীয় কমিটি
ইমেইল. drmazed96@gmail.com
মোবাইল.০১৮২২৮৬৯৩৮৯    


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: