-2025-08-28-05-07-21.jpg)
বিশেষ প্রতিবেদন
ডাকসুর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদটিকে ধরা হয় টিএসসি-নির্ভর নেতৃত্বের প্রতীক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি শুধু একটি মিলনকেন্দ্র নয়; এটি ছাত্রসমাজের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার প্রধান আসন। এখানেই গড়ে ওঠে আবৃত্তি, নাটক, সংগীত, বিতর্ক ও কুইজের মতো অসংখ্য সংগঠন, যা শিক্ষার্থীদের মানবিক ও নান্দনিক চেতনা বিকাশে অবদান রাখে।
ডাকসু নির্বাচনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ তাই নিছক আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নয়; বরং এটি হলো টিএসসি-নির্ভর সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের প্রতীক। এই পদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সমন্বয়, বিকাশ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসি (টিএসসি সেন্টার) কেবল একটি স্থান নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক চর্চা, সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের এক অবিচ্ছেদ্য পরিসর। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে টিএসসি হয়ে উঠেছে ছাত্র-অধিকার, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ-আলোচনার প্রধান মঞ্চ। ডাকসু নির্বাচনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদের গুরুত্ব তাই নিছক আনুষ্ঠানিক কোনো পদ নয়; এটি টিএসসি-নির্ভর কর্মকাণ্ডের সার্বিক দিকনির্দেশনার প্রতীক।
টিএসসি ও শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক বন্ধন
টিএসসি-কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। আবৃত্তি, নাটক, সংগীত, চিত্রকলা, বিতর্ক কিংবা কুইজ—এসব সংগঠন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষার বাইরে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হচ্ছেন সেই নেতৃত্বের প্রতীক, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা সমন্বয় ও বিকাশে ভূমিকা রাখেন।
টিএসসি নীতিমালা প্রস্তাব কমিটির নির্বাচন
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত “টিএসসি নীতিমালা প্রস্তাব কমিটি নির্বাচন ২০২৫”-এ শিক্ষার্থীরা তাদের আস্থার প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন—
- মোহতাসিন বিল্লাহ ইমন (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি কুইজ সোসাইটি),
- শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি),
- ওয়ালিজা বিনতে সামস্ (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি আবৃত্তি সংসদ),
- রওনক জাহান রাকামনি (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাংস্কৃতিক সংসদ)।
এই নির্বাচন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো নির্বাচিতগণ টিএসসি-কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের জনপ্রিয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি এবং টিএসসিতে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর গতি-প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব
ডাকসু নির্বাচনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী কিংবা এই খাতের প্রতিনিধি নির্বাচিতরা কেবল একটি কমিটি চালাবেন না; বরং তারা নির্ধারণ করবেন—
- টিএসসির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারা কোন পথে এগোবে,
- শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা কতটা বিকশিত হবে,
- আর সাংস্কৃতিক অঙ্গন কতটা হবে মুক্তচিন্তা, মানবিকতা ও জাতীয় চেতনার প্রতিফলন।
টিএসসির এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন টিএসসির পরিচালক মহোদয়। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের সভাপতি নাজমুল হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সভাপতি মো. শাহ সুফি ওয়াছি মিয়া। নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়া সাংস্কৃতিক গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পরিশেষে বলা যায়, ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক টিএসসি কেন্দ্রিক সংগঠনগুলোকে ভালোভাবে বুঝতে যদি না পারে, তাহলে বিশ্বদ্যিালয়ের মুক্ত সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কেননা টিএসসি-কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কেবল ক্যাম্পাসের বিনোদন নয়; বরং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানবিক, নান্দনিক ও সৃজনশীল বিকাশের প্রধান উৎস। ডাকসুর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং টিএসসি-ভিত্তিক প্রতিনিধিরা এই উত্তরাধিকারের ধারক-বাহক। তাই টিএসসিকে ঘিরে যে নেতৃত্ব গড়ে উঠছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংস্কৃতিক দিকনির্দেশনা এবং জাতীয় জীবনে এক অনন্য ভূমিকা রাখবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: