odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৩ April ২০২০ ০৫:৩৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৩ April ২০২০ ০৫:৩৮

 

 

 সঠিক শিক্ষা কাঠামো এবং যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি দেশের উন্নয়নের চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। তাই শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দিন বদলের ইশতেহার, রুপকল্প-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে ২৪টি লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০ অনুমোদিত হয়েছে। মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নে ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিঞ্চু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলাই এ শিক্ষানীতির মুল উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধিকাংশ বিষয়ের মতো শিশুর শিক্ষার বিষয়টিও উপেক্ষিত থেকে গেছে। বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হলেও অনেক শিশু পড়ালেখা শেষ করছে না। প্রতিবছর বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী । আবার অনেক শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তিই হচ্ছে না। প্রতিবন্ধি, আদিবাসী, হাওর ও পাহাড়ী এলাকার অনেক শিশু এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ারই সুযোগ পাচ্ছে না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৯৯ শতাংশের বেশী শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমছে না।
আমরা সবাই জানি একজন শিশুকে আদর্শ ও সুচিšিতÍ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সুশিক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে অনেক কারণেই ব্যাহত হচ্ছে সুশিক্ষা। বৈষম্য-এর মধ্যে অন্যতম কারণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বলতে সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও সুবিধা প্রাপ্ত শিশুদের কথা বুঝানো হয়েছে। অনেকে মনে করে থাকেন বস্তির শিশুদের আচার-আচারণ অন্যান্য শিশুর তুলনায় অনেকটা খারাপ হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষা দিলে তাদের সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করলে সকল শিশুর ব্যবহার ও আচরণে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক শিশু সনদ এবং শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশুকে তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, শিশুতোষ বিনোদনের সর্বোত্তম ব্যবস্থাসহ শিশুদের সব ধরণের নির্যাতন ও বৈষম্যমুলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন ও হরতালের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসুচি চলাকালীন নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। আবার বিভিন্ন কর্মসুচিতে রাজধানী জুড়ে শুরু হয় অসহনীয় যানজট। তখন ছোট ছোট শিশুদের ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। এতে স্কুলে যেতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশের সুবিধাবঞ্চিত, স্কুল বহির্ভূত, ঝরে পড়া এবং শহরের কর্মজীবি দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দেশের নির্বাচিত ৮৯টি উপজেলায় সাড়ে সাত লক্ষ শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে। দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের কর্মজীবি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের উন্নততর জীবন অনুসন্ধানে শিক্ষা, নিরাপত্তা ও উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম চলছে।
মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সরকারের দারিদ্র হ্রাসকরনের কৌশলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ। এ কারনেই সরকার এখাতে অধিক হারে বরাদ্দ দিয়ে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হার বাড়ানো, ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমাদের সকলের উচিৎ এই অর্জন ধরে রাখা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: